মির্জা গালিব:
এক,
ট্রাইবুনালে শেখ হাসিনার রায় হবার আগে কয়েকদিন এদিক ওদিক কয়েকটা বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলা করছে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ। কিন্তু তাতে কি হাসিনার রায় আটকাইছে? আটকায় নাই। সামনে নির্বাচন বানচাল করার জন্য আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা এখন টার্গেটেড কিলিং মিশনে নামছে। কিন্তু তাতে কি নির্বাচন আটকাবে? আটকাবে না। কারন, খুন আর গুমরে অতিক্রম কইরাই জুলাইয়ের জন্ম হইছে। গুন্ডামী, সন্ত্রাস আর নির্বিচারে খুন কইরা যদি ক্ষমতা ধইরা রাখা যাইত, তাইলে কি হাসিনারে এখন পালাইয়া ভারতে থাকতে হয়? এরশাদের মতন সামরিক শাসকও তো ক্ষমতাচ্যুত হবার পরে দেশ থাইকা পালায় নাই। কিন্তু হাসিনা পালাইছে, পালাইতে হইছে।
দুই,
তো, যেই হাসিনা ক্ষমতায় থাইকা ক্ষমতা ধইরা রাখতে পারে নাই; সেই হাসিনা কি ক্ষমতার বাইরে থাইকা আবার ক্ষমতায় আসতে পারব? পারবো না তো। তাইলে, যারা এই টুকটাক সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়া খালি নিজের জীবনরে ধ্বংস করার ইচ্ছা করতেছে, তারা কেন এই কাজ করতেছে? এরা আসলে বিগত দিনে ক্ষমতার জোরে সন্ত্রাস কইরা জীবন চালাইছে, এখন এই ক্ষমতাহীন দীন-হীন জীবনে মানায়ে চলতে পারতেছে না। অনেকটা ড্রাগ এডিক্টেড লোকের মত, উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম চলতেছে তাদের। কিন্তু, মস্তিষ্কের ডোপামিনের তাড়নায় দুই একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম কইরা ক্ষমতাতো ফেরত আসব নারে ভাই। মাঝখান দিয়া যেইটুকু আছে সেইটুকুও যাইব। ভারতেই যদি যাইতে চাও, সরাসরি ভারত যাও; পলাতক নেতাদের চুরি করা টাকা থেকে কিছু ভাগ চাও; দেখ দেয় কি না। খুন কইরা ভারত গেলে তো ভারতও তোমাগো রাখবনা দুই দিন পর, কোনদিন আর এই দেশেও ফিরতে পারবা না।
তিন,
ভায়োলেন্স করার মূল সূত্র হইল মানুষরে ভয় দেখাইয়া ঘরে আটকাইয়া রাখা, নিষ্ক্রিয় করে দেয়া। কিন্তু এই দেশের তরুণ প্রজন্ম সেই ভয়রে বঙ্গোপসাগরে ভাসাইয়া দিয়া একজন একজন কইরা শরীফ ওসমান হাদী হইয়া উঠছে। জুলাই যে বাংলাদেশরে বদলাইয়া দিছে- এইটাতো এখন বুঝতে পারার কথা। এক জনরে চোরাগুপ্তা হামলা কইরা মারলে, রাস্তা থেকে আর একজনও তো সরে না এখন এই দেশে। এই লক্ষ কোটি হাদীর দেশে ফ্যসিবাদী শাসন আর কেমনে ফেরত আইব?
চার,
হাসিনা তার ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের সময়ে মুক্তিযুদ্ধরে চেতনার ব্যবসা, চুরি-ডাকাতি আর গুম-খুনের সমান বানাইয়া ফেলছিল। তাও তখন অন্তত ক্ষমতা ভোগ করছিল। আর এখন আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের গুণ্ডারা মুক্তিযুদ্ধের 'চেতনার' অবশিষ্ট অংশরে টার্গেটেড কিলিং আর টেরোরিজমের সমান বানাইয়া ফেলতাছে। বিজয়ের মাসে কি অসাধারন 'মুক্তিযুদ্ধ-প্রেম' দেখাইতেছে তারা! এই দেশে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ যতবেশি এই রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে থাকব, বাংগালি জাতীয়তাবাদী সেকুলারদের রাজনীতি তত বেশী এই দেশের তরুনদের অন্তর থেকে নাই হইয়া যাইব। একদা বিশাল জনপ্রিয় মুসলিম লীগ মুক্তিযুদ্ধের পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়া এই দেশ থেকে হারায়ে গেছে; জুলাইয়ের পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়া আওয়ামীলীগও তার শেষকৃত্যের দিকে হাইটা যাইতেছে। পুরো একটা প্রজন্মের জীবন আর রক্তের দাগের উপর দিয়া কোন সন্ত্রাসী রাজনীতির প্রত্যাবর্তন তো আর হইব না এই দেশে।