Image description

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই সাংবাদিক, কলামিস্ট ও টকশো আলোচক আনিস আলমগীরকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে পরদিন আজ সোমবার (১৫ই ডিসেম্বর) সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। বিবৃতিতে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের এই সংগঠন বলেছে, এ ধরনের আচরণ অতীতের স্বৈরাচারী শাসনামলে সাংবাদিকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের স্মৃতি উসকে দেয়।

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, "তিনি কি ভয়ে ভয়ে বলবেন, নাকি নির্ভয়ে বলবেন। কারণ, তিনি ‘ছায়া’কে ভয় পাচ্ছেন।" ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে অভিযোগ উঠেছিল, এখন আবার সেই ভয়ের সংস্কৃতিই ফিরে এসেছে কিনা, সেই প্রশ্নও আসছে। মতিউর রহমান চৌধুরীর আশঙ্কা, 'কেন জানি মনে হয়, আগের পরিস্থিতিতির দিকেই যাচ্ছি আমরা।'

বর্তমান পরিস্থিতিকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যায়িত করে বিশিষ্ট সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, চব্বিশের পরিবর্তনের পরে এমন পরিস্থিতি আশা করিনি। আশা করেছিলাম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। স্বাধীনতার নামে হঠকারিতা যেন না করি, তাও খেয়াল রাখতে হবে। তবে এসব ঘটনা আমাকে আতঙ্কিত করে। কেন জানি মনে হয়, আগের পরিস্থিতিতির দিকেই যাচ্ছি আমরা। আমার মনে হয়, সরকারপ্রধান দৃষ্টি না দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।

নিজের সাংবাদিকতা–জীবনে মামলা, হামলা ও জেল খাটার কথা তুলে ধরে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, কোনো সরকারের আমলেই তিনি ভালো ছিলেন না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন খুলে লিখতে বলেছেন। এটা আশার কথা। কিন্তু সাংবাদিকেরা কি লিখতে পারছেন—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সাংবাদিকেরা সেলফ সেন্সরশিপ থেকে বের হতে পারছেন না। এখান থেকে বের হতে না পারলে যাত্রাটা কঠিন হবে।

কিছুসংখ্যক সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ভূমিকারও সমালোচনা করেন মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ভারতে যদি ‘গদি সাংবাদিক’ হয়, বাংলাদেশে হবে ‘তেলবাজ সাংবাদিক’। তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিক বেতন পান না এটা যেমন ঠিক, আবার অনেকের বেতন প্রয়োজন হয় না, এটাও স্বীকার করতে হবে। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে। আত্মসমালোচনাও করা উচিত।

প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে ধানমন্ডির একটি জিম থেকে আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় আজ সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে জানা যায়, ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামের একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ গতকাল রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন। মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

আজ এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বহু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা করা হয়েছে এবং অনেকে এখনো কারাগারে রয়েছেন। এ বিষয়ে এর আগেও সম্পাদক পরিষদ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা হত্যা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা এসব মিথ্যা মামলা ও হয়রানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি। এ ধরনের আচরণ অতীতের স্বৈরাচারী শাসনামলের সাংবাদিক নিপীড়নের স্মৃতিই মনে করিয়ে দেয়।

এতে আরও বলা হয়, সম্পাদক পরিষদ এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং সব ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।