ছাত্র জনতার কঠোর আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। এর ঠিক একমাস পরই নারায়ণগঞ্জ শহরে বাস টার্মিনাল দখল নেয়াকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা সাখাওয়াত ইসলাম রানার অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সেদিন হলুদ রঙের জামা ও চোখে কালো চশমা পড়া এক যুবক বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনার পরও পুলিশ ওই অস্ত্রধারীকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি। তবে গত ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির জুলাই পদযাত্রা চলাকালে কয়েক হাজার মানুষের ভীড়ে হাজির হয়েছিলেন সেই অস্ত্রধারী। তিনি পদযাত্রা চলাকালে লম্বা সময় ধরে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আব্দুল্লার পাশে হেঁটেছেন। একপর্যায়ে হাসনাত আব্দুল্লার সাথে মোবাইলে সেলফিও তোলেন। পরে সেই ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসনাত আব্দুল্লাহ ও ব্যারিস্টার ফুয়াদও সন্ত্রাসীদের এই টার্গেটে আছেন বলে খবর বের হয়। তাই নারায়ণগঞ্জের সেই অস্ত্রধারী আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। তবে সেই অস্ত্রধারী এখনো আইনের আওতায় না আসায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জের এনসিপি নেতারা।
এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী বলেন, হাদিকে যারা গুলি করেছে তারা তো তার আশপাশেই ছিলো। আর নারায়ণগঞ্জের সেই অস্ত্রধারী যখন হাসনাত আব্দুল্লার সাথে এসে ছবি তুলেছে তখন তো এখনকার পরিস্থিতি ছিলনা। তারপরও আমরা প্রশাসনকে বলেছি যাতে করে সকল অবৈধ অস্ত্র দ্রুত উদ্ধার করা হয় এবং অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তেমনটা কমই দেখা যাচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা কিছুটা বিব্রত। আমরা এনসিপি নেতাকর্মীরা চাই নির্বাচনের আগে একটি সুন্দর পরিবেশ। এরজন্য সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।
এনসিপি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আহমেদুর রহমান তনু এ বিষয়ে বলেন, সেই অস্ত্রধারীর সাথে হাসনাত আব্দুল্লার ছবি দেখে আমরাও অবাক হয়েছি। সে আসলে ভীড়ের মধ্যে পদযাত্রায় ঢুকে পড়েছিলো। এরপর আবার বের হয়ে গেছে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি যাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সেটি এখনো হয়নি। শুধু হাসনাত আব্দুল্লাহ না, আমাদের প্রতিটি জেলায় যেসব নেতারা একটু পরিচিতি পেতে শুরু করেছে তাদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। আমাদের কানে এই খবরগুলো আসছে। জুলাই আন্দোলনের সময় যে পরিমান অস্ত্র লুট হয়েছে তার অধিকাংশই এখনো উদ্ধার হয়নি। নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে অবৈধ অস্ত্র, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে জানা গেছে, বাস টার্মিনালে গুলি করার পরও হাসনাত আব্দুল্লার সাথে মিছিলে হাঁটা সেই যুবকের নাম রাসেল। তিনি নগরীর মাসদাইর এলাকায় থাকেন। জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর দেওভোগ লিচুবাগ এলাকার এক সময় শীর্ষ মাদক বিক্রেতা হালিম ওরফে ডিব্বা হালিমের সাথে জাকির খানের বাড়িতে ফুল নিয়ে যেতে দেখা গেছে অস্ত্রধারী সেই রাসেলকে। তবে প্রকাশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি করার পরও কিভাবে সেই অস্ত্রধারী পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে জানতে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিংএ আছেন বলে জানান।