ভিন্ন ইস্যু নিয়ে সিলেটে বিএনপি-জামায়াতের শোডাউনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করার পর আকস্মিক স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বিএনপির কর্মসূচি। মাত্র একদিনের ব্যবধানে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে থাকা একই মাঠে দুটি পরস্পরবিরোধী বলয় এ আয়োজনে ব্যস্ত ছিল গত কয়েক দিন ধরে।
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এটা উভয় দলের মধ্যে সমর্থন-শক্তি প্রদর্শনের শোডাউন বলে চাউর রাজনৈতিক মহলে। সর্বশেষ জামায়াত কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করলেও বিএনপি আকস্মিক কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে দলের চেয়ারপারসনের গুরুতর অসুস্থতায়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ থাকায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দলীয় সব কর্মকাণ্ড স্থগিত থাকবে।
তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে গোটা সিলেট বিভাগের ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা, জেলা থেকে সাংগঠনিক ব্যানারে সবাই অংশ নেওয়ার কথা ছিল। আর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও থাকার কথা ছিল। প্রস্তুতি ছিল কয়েক লাখ লোকের সমাগমে সিলেট নগরী জনসমুদ্রে পরিণত করার। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখার কথা ছিল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।
অন্যদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরীর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে।
তিনি জানান, সমাবেশে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জোটের বাকি সব শীর্ষ নেতারা মঞ্চে থাকার কথা।
তিনি জানান, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ দুপুর ২টায় শুরু করার প্রস্তুতি রয়েছে। মঞ্চ করা হবে অনেক বড়, যাতে ১শ বক্তার বসার স্থান হয়। সিলেট বিভাগে ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা, জেলা থেকে জোটভুক্ত সব দলের সাংগঠনিক ইউনিট নিজ নিজ ব্যানারে সমাবেশে অংশ নেবেন। তাই লোক সমাগম কয়েক লাখ হওয়ার কথা। এ বিবেচনায় সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবকও প্রস্তুত করা হয়েছে।
মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম জানান, ৮ দলের নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। ফলে জনসমুদ্রে পরিণত হবে সিলেট নগরী। তাই দুপুরের খাবারের কোনো আয়োজন রাখা হয়নি সমাবেশস্থলে। নিজ নিজ দায়িত্বে খাওয়ার আয়োজন করবেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ৪ ডিসেম্বরের ৮ দলীয় জোটের সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব প্রফেসর ডক্টর আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী ও মহাসচিব ইউসুফ সাদেক হক্কানী, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি সরওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) চেয়ারম্যান তাসমিয়া প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চান প্রমুখ শীর্ষ নেতাদের।
বিএনপি ‘বিজয়ের মাসে বিজয়ের মশাল’ কর্মসূচি আগামী ৪ ডিসেম্বর সিলেটে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করার জন্য চূড়ান্ত করেছিল, যা ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে রোডমার্চ করে আসার কথা ছিল।
কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর একটি হোটেলে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বক্তারা বিজয়ের মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন এবং কর্মসূচিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখবেন বলে জানানো হয়েছিল।
ওই প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সঞ্চালনা করেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী ও এমএ মালেক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল করিম ময়ুনসহ জাতীয় ও স্থানীয় নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতায় বিএনপির এ কর্মসূচি আকস্মিক স্থগিত করা হয়েছে।
অপরদিকে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের নেতৃত্বাধীন আট দলের নেতারা আগামী ৪ ডিসেম্বর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় মহাসমাবেশ করবেন; যার মূল দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ ৫ দফা দাবি এবং গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বিজয় নিশ্চিত করা। সমাবেশ সফলের জন্য আট দলের ১৩ সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে সিলেটে অবস্থান করছেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোহাম্মদ মুনতাসির আলীসহ অন্যান্য শরিক দলের সিনিয়র নেতারা।
জামায়াত নেতাদের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তার সাক্ষাৎ
এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা জেমস এ স্টুয়ার্ট।
সোমবার বিকালে সিলেট মহানগর জামায়াত কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মার্কিন দূতাবাসের সহকারী রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মো. ইকবাল মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন।
সৌজন্য সাক্ষাতকালে মার্কিন কর্মকর্তারা জামায়াতে ইসলামীর কাছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান। এছাড়া দলটি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তাদের কর্মপরিকল্পনা কী হবে এবং দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জামায়াতের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবহিত হন তারা।
বৈঠক শেষে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তার সঙ্গে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডগুলো তাদের সামনে তুলে ধরেছি।
তিনি আরও জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারে জামায়াতের ভূমিকা এবং ক্ষমতায় গেলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে দলের পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে মার্কিন সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়েও বিস্তারিত আলাপ হয়েছে।
বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন- দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরীর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল এবং সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী ও জেলা সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।
আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগর সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, জেলা ও মহানগর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারিসহ অন্যান্য সহকারী সেক্রেটারি ও স্থানীয় নেতারা।