Image description
পুরোপুরি কার্যকর করতে আরও দু-তিন মাস লাগতে পারে

অধ্যাদেশ জারির পরদিন থেকেই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সচিব হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আপাতত একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি ও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া এই সচিবালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ, অবকাঠামো ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে করা হবে। এই সচিবালয় পুরোপুরি কার্যকর করতে আরও দু-তিন মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আগামীকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টা একটি বৈঠকে বসবেন। সেখানে এই সচিবালয় কার্যকর করার ব্যাপারে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রস্তুতি শেষ হলে অধ্যাদেশের ৭ ধারা কার্যকর করতে আরও একটি গেজেট জারি করতে হবে। এ ধারাতেই বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ কাজটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে আইন মন্ত্রণালয় করে থাকেন। অধ্যাদেশের সাত ধারা কার্যকর করতে গেজেট জারি না করা পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় থেকেই এসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী কালবেলাকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় পুরোপুরি কার্যকর করতে কতদিন লাগবে, সেটা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে আজ (গতকাল সোমবার) থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে এই সচিবালয়ের কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। এই সচিবালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী লোকবল নিয়োগসহ সব কার্যক্রম দ্রুতই করা হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারের সহযোগিতায় এই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় বাস্তবায়ন হলো। আশা করছি, সচিবালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নেও সরকার একইভাবে সহযোগিতা করবে।

এদিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেই সচিবালয় প্রতিষ্ঠা আইনগত ভিত্তি পেল। এখন এটিকে এগিয়ে নিতে হবে। আগামীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, এই সচিবালয়কে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুফল মানুষ ভোগ করতে পারবে।

এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের অধ্যাদেশ জারি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি মাইলফলক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে আমাদের অধস্তন আদালত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি পেল। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নামে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাদের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল, সেটি এখন প্রধান বিচারপতির অধীনে সচিবালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। অর্থাৎ অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি, ছুটি, শৃঙ্খলা সব কিছুই এখন উচ্চ আদালতের অধীনে হবে। এটি অর্জন করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অতিক্রম করতে হয়েছে।

শিশির মনির আরও বলেন, এই পৃথক সচিবালয় করায় বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারব। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে চেক-এন্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠিত হবে। আশা করব, এই স্বাধীনতা পাওয়ার পর অধস্তন আদালতের বিচারকরা তাদের শৃঙ্খলাবিধি মেনে চলবেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনভাবে কাজ করবেন। এ ছাড়া আগামীতে যে সরকার ক্ষমতায় আসবেন, তারা এই পৃথক সচিবালয়ের বাকি কাজ এগিয়ে নেবেন।

এর আগে গত রোববার বহুল আকাঙ্ক্ষিত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর আগে গত ২০ নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ অধস্তন আদালতের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিচার বিভাগের উন্নয়ন বা কারিগরি প্রকল্পের এবং অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত ব্যয় সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা হলে তার অনুমোদন একাই দিতে পারবেন প্রধান বিচারপতি। সরকার সময়ে সময়ে, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই আর্থিক সীমা মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বা অন্য কোনো উপযুক্ত কারণে বৃদ্ধি করতে পারবে। আর্থিক পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হলে তার অনুমোদন নিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে পাঠাতে হবে। এমন বিধানসহ অধস্তন আদালতের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।

জুডিসিয়াল সার্ভিস প্রশাসনের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে অধ্যাদেশের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় সার্ভিস প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হবে। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় সার্ভিস সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান সংক্রান্ত কাজে রাষ্ট্রপতির পক্ষে প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে। সার্ভিস সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান সংক্রান্ত কার্যাদি সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সচিব কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট কমিটির পরামর্শের জন্য উপস্থাপিত হবে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় সার্ভিস সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান করলেও, আইন ও বিচার বিভাগ ও এর কার্যপরিধিতে বর্ণিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এবং অন্য কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের দপ্তরে সার্ভিস সদস্যগণের পদায়ন বা বদলি সংক্রান্ত কার্যাদি এতদুদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে, সম্পাদিত হবে।

অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান সংক্রান্ত বিষয়াদি যথাযথরূপে পালনের জন্য এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ। যেহেতু সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথককরণকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে;

যেহেতু সংবিধানের ১০৯ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান সংক্রান্ত বিষয়াদি যথাযথরূপে পালনের জন্য এবং বিচার বিভাগের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা পালনের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক এবং এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তসমূহ সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; যেহেতু আপিল বিভাগের ৭৯/১৯৯৯ নম্বর সিভিল আপিলের রায় বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথককরণ বাস্তবায়নকল্পে বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে; এবং যেহেতু সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির নিকট এটা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে; সেহেতু সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করলেন।

বিচার-কর্ম বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দীর্ঘদিনের দাবি। এই সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। পাশাপাশি বিচার বিভাগ পৃথককরণ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়েও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় করার কথা বলা হয়েছে। ওই রায়ের আলোকে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার পরও বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব থেকে যায়। পরে রাজনৈতিক সরকারের আমলে বিচার বিভাগ পৃথককরণের কাজ আর এগোয়নি।

গত বছর ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। দায়িত্ব নেওয়ার অল্পদিনের মাথায় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে বিচার বিভাগের সংস্কারের লক্ষ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। সেখানেও তিনি বিচার বিভাগের দ্বৈত শাসনের অবসানে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় জোর দেন। অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা ততদিন পর্যন্ত নিশ্চিত হবে না; যতদিন না বিচার বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা, অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটি হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রথম ধাপ।’

এরপর বিচার বিভাগের সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী বর্তমান প্রধান বিচারপতির নির্দেশে গত বছরের ২৭ অক্টোবর পৃথক সচিবালয় করার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি হাইকোর্ট বিভাগকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের এই তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ নয়। কেননা বিদ্যমান কাঠামোতে আইন মন্ত্রণালয় হতে অধস্তন আদালত সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব আসার পর হাইকোর্ট বিভাগ তার তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু আমাদের সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের মর্ম অনুসারে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্ট বিভাগের একচ্ছত্র অধিকার। তাই সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক।

এ ছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কার্যত সংবিধানের ২২, ৯৪(৪), ১০৯ এবং ১১৬ক অনুচ্ছেদের বিধান এবং মাসদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি নির্বাহী বিভাগের আওতায় থেকে গেছে। একইভাবে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর সুপ্রিম কোর্ট এবং আইন মন্ত্রণালয়—এ দুটি কর্তৃপক্ষের যুগপৎ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিচারকদের বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয় নির্বাহী বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে থাকায় বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করা। সরকার সেই দাবি পূরণ করেছে। বিচার বিভাগের আর্থিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে এসেছে। এটাই প্রত্যাশিত ছিল। এখন আশা করব, বিচার বিভাগ জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবেন।’

জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহজাহান সাজু বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগের সংস্কারে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় করায় এসব সংস্কার পূর্ণতা পেল। আশা করি পৃথক সচিবালয় গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ পুরোপুরি নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।