Image description

ভারতের অনুমতি না পাওয়ায় বুড়িমারী স্থলবন্দরে আটকা সেই ট্রাকটি অবশেষে ভুটানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে।

নথিপত্রের ত্রুটি সংশোধনের পর সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে ভুটানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় কার্গোবাহী ট্রাকটি।

এর আগে ভারতের অনুমতির অপেক্ষায় চার দিন ধরে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ট্রানজিট পণ্যের কার্গোবাহী ট্রাকটি সেখানে আটকে ছিল।

এর আগে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে ভুটানের পণ্যবাহী কার্গোটি কাস্টমসের স্কট নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পৌঁছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সই করা চুক্তির আওতায় প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়াটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলো। যা দুই দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।

শুক্রবার বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভূ-বেষ্টিত দেশ ভুটানের পণ্য পরিবহনের প্রথম ‘ট্রায়াল রান’ শুরু হয়। কিন্তু পণ্যবাহী কার্গো ট্রাকে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকার কারণে ভারতে প্রবেশের অনুমতি পেতে জটিলতা তৈরি হয়। চার দিন ধরে অপেক্ষার কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি হলেও, দ্রুত কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগে তা নিরসন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সাপ্তাহিক ছুটি কারণে তারা এ কার্যক্রম এগিয়ে যেতে পারিনি। 

বুড়িমারী স্থলবন্দরের কর্তৃপক্ষ জানান, নথিপত্রের ত্রুটি সংশোধনের পর সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের পক্ষ থেকে এ চালানের জন্য রোড পারমিট দেওয়া হয়। 

কার্গো গাড়িটি নিয়ে আসা চালক আলমগীর হোসেন বলেন, সন্ধ্যায় ভারতে প্রবেশ করেছি। আশা করছি, এর মাধ্যমে নতুন ব্যবসা সূচনা তৈরি হবে। 

এর আগে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের ঠিক পরেই এই ট্রায়াল রান শুরু হয়, যা এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরীক্ষামূলক এ চালানটি মূলত ৬ দশমিক ৫ টন খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য (শ্যাম্পু, শুকনো পাম ফল, আইস টি, চকলেট ও জুস) নিয়ে যাচ্ছে।

এই ট্রানজিট ২০২৩ সালের ২২ মার্চ স্বাক্ষরিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। স্থলবেষ্টিত হওয়ায় এতদিন ভুটানকে পণ্য আমদানির জন্য মূলত ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের ওপর নির্ভর করতে হতো।

এই পরীক্ষামূলক চালানটি থাইল্যান্ডের ল্যাম চাবাং বন্দর থেকে প্রথমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে সড়কপথে এটি প্রায় ৬৮৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত আসে। বুড়িমারী থেকে চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে অবশেষে ভুটানের ফুয়েন্টশোলিংয়ে পৌঁছাবে।

এই ট্রানজিট পথে বাংলাদেশ সরকার টোল, এসকর্ট ফিসহ বিভিন্ন চার্জ বাবদ রাজস্ব পাবে, যা দেশের অর্থনৈতিকখাতে নতুন আয়ের উৎস তৈরি করবে।

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ট্রায়াল রান সফলভাবে শেষ হলে ভুটান চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়মিত পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার শুরু করবে। এতে ভুটানের আমদানি-রপ্তানি খরচ বহুলাংশে সাশ্রয় হবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশও ট্রানজিট ফি এবং অন্যান্য মাশুল বাবদ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ট্রানজিট সফলভাবে সম্পন্ন হলে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ জোরদার হবে এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও মজবুত হবে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়োজনীয় নথিপত্রের ত্রুটি সংশোধন করে আমরা দ্রুত ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করি। অনুমতি পাওয়ার পরপরই কার্গো গাড়িটি ভারতের পথে যাত্রা শুরু করেছে, যা এরপর ভুটানের গন্তব্য ফুয়েন্টশোলিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। আশা করি, ট্রানজিট সফলভাবে সম্পন্ন হবে।