Image description
 

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। প্রশাসনিক ক্যু করার চেষ্টা করছেন। আগামী নির্বাচনে ছলে বলে কৌশলে কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় বসে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। জনগণ ভোট দিক বা না দিক ক্ষমতায় আমাদের যেতেই হবে। কিন্তু বেলা শেষ, দিনও শেষ ঐ সূর্যও ডুবে গেছে। এ দেশে এটা আর হবে না। এটা আর আমরা হতে দেব না।

 

আজ সোমবার বিকেলে নগরীর শিববাড়ী চত্বরে (বাবরী চত্বর) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দাবিতে ইসলামপন্থী ৮ দলের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একটা দেশকে সভ্য দেশ হতে হল সেই দেশটাকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হয়। আজ কিছু দল এবং ব্যক্তি বাংলাদেশকে দফায় দফায় তারা দুর্নীতি চ্যাম্পিয়ন করে বিশ্বের দরবারে অপমানিত করেছে। এদেশের সকলের অতীতের রেকর্ড বাংলাদেশের জনগণের হাতে আছে।

 

তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় সকল ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতি, বৈষম্য, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বিপ্লবের পরের দিন থেকেই একটি গোষ্ঠী নিজেদের কপাল কিস্মত গড়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আজ চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে সমাজজীবন অতিষ্ট, তটস্থ, ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। বিনিয়োগকারী শিল্পপতি ব্যবসায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কেউ শান্তিতে নাই। আগের চেয়ে চাঁদার রেট বেড়ে গেছে বলে সবাই বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলে। তারা বলেন- আগেও ভালো ছিলাম না এখন আরও খারাপ। কোনও ইসলামীর দলের নামে চাঁদাবাজির তাদের কপালে জুড়ে দেওয়া হয়নি। কোনও দেশপ্রেমিক দল ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজ হয়ে আবির্ভূত হয়নি। যারা আবির্ভূত হয়েছিলেন দায় ও দরদ নিয়ে তাদের সঙ্গে বসেছিলাম, তাদের বলেছিলাম, এটি শহিদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। এটা বন্ধ করতে হবে।

জামায়াতে আমির তরুণ-যুবকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা তরুণ যুবকদের জিজ্ঞেস করতে চাই যাদের বয়স ৩৫ বা তার নিচে একটা ভোট দিতে পারও নাই। আগামীতে ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলুক, কেউ চুরি করুক, কেউ ভোট হাইজ্যাক করুক, তোমরা কি তা বরদাস্ত করবে? আমরা তোমাদের কথা দিচ্ছি, তোমাদের ভোটের পাহারাদারি করার জন্য আমরা যুবক হয়ে সেদিন তোমাদের সঙ্গে একইভাবে লড়ব।

তিনি বলেন, এখন থেকে আমরা সারা দেশে জনগণের ব্যাপক ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। এই ভালোবাসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মনের জ্বালায় কেউ আমাদের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, পোস্টারগুলো ছিঁড়ে খান খান করে ফেলছে। জনগণ আজকাল পোস্টার, লাইট পোস্টার, রাস্তায় টানানো পোস্টার দেখে সিদ্ধান্ত নেয় না। আজকে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যাদের তারা ভালোবেসেছে তাদের বুকের ভেতরে তার পোস্টার স্থায়ীভাবে স্থাপন করেছে। রাস্তার পোস্টার ছিঁড়তে পারবা, বুকের পোস্টার ছিঁড়তে পারবা না। অতএব ঐ পোস্টার ছেঁড়াছিঁড়ি করে কোনও লাভ নেই।

তিনি আরও বলেন, দিশাহারা হয়ে, হতাশ হয়ে ক্ষব্ধ হয়ে চোরাগলিতে কেউ যদি হাঁটার চিন্তা করেন, তাহলে প্রয়োজনে আরেকটা ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। যেই ৫ আগস্ট সন্ত্রাসকে, ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে দিয়েছিল সেই ৫ আগস্ট প্রয়োজনে রুখে দেবে।

তিনি আরও বলেন, এখন থেকে ছাত্র-জনতা, শ্রমিক জনতা, ব্যবসায়ী জনতা, আপামর জনতা, শিশু থেকে বৃদ্ধ সমস্ত মানবতার ঐক্য আমাদের গড়ে তুলতে হবে। এই ঐক্যই আগামী দিনের জাতীয় সংসদে যাবে বিজীয়র বেশে। এই বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ আমরা আছি মজলুমের পক্ষে, আমরা আছি অপশাসনের বিরুদ্ধে, আমরা আছি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, আমরা আছি ন্যায়ের পক্ষে, আমরা আছি কোরআনের বিধানের পক্ষে। এ বিজয় আমাদের হবেই।

সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও পির সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম বলেন, অনেকে বলেন আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নই। কিন্ত আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্ত তারাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে হিসাব নিকাশ করে দেখেছেন তাদের পায়ের তলে মাটি সরে গেছে। এবার নির্বাচন নিয়ে আপনারাই ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। কেন্দ্র দখল করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন, সেদিন ভুলে যান। সে সুযোগ আর আপনারা পাবেন না।

খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে দেখতে পারছি, বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্তি। ৭২ বাকশালপন্থি আর একভাগ ২৪’র বিপ্লবপন্থি শক্তি।

তিনি বলেন, রক্তের সাগর পেরিয়ে ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পর যেই ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করা হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ বাংলার মাটিতে আসবে না। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কার্যকরে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে এই মাহাত্মকে নষ্ট করবেন না। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হোক।

তিনি বলেন, ব্যর্থ হলে ইন্টেরিম সরকার ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। কলঙ্ক নিয়ে আপনাদেরও বিদায় নিতে হবে। বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

খেলাফত মসজিলেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ মামার বাড়ি পালিয়ে গেছে। আর তারা বাংলার জমিনে ঠাঁই পাবে না। আসুন আমরা একবার ইসলামী দলকে ক্ষমতায় আনি। ইসলামী দল রাষ্ট্রীয় ক্ষতায় আসলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ড. হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, প্রশাসনের রদ বদল হওয়ার কথা লটারির ভিত্তিতে কিন্তু এখন এখন দেখা যাচ্ছে তার ভেতরে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। জনগণের প্রতি তিনি গণভোটে হ্যাঁর পক্ষে ভোট দেওয়ার আহবান জানান।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, এখনও সময় আছে, আপনারা জনগণের কাতারে আসুন। না হলে আওয়ামী লীগের মতো পালিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে খুলনায়, গত এক বছরে তার চেয়ে দুই গুণ বেশি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এই প্রশাসন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরাধীনতা চায় না, তারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলামীর আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী বলেন, যারা শরিয়তী আইন মানে না আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের লাল কার্ড দেখাবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হাক্কানি বলেন, ৮ দলীয় জোটকে ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র চলছে। যদি কেউ সেই ষড়যন্ত্রে পা দেয় সে হবে জাতীয় বেঈমান।

এদিন দুপুর ১২টায় পবিত্র অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল ও  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগরী সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিনের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মোস্তফা কামাল, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, খুলনা জেলা আমির মাওলানা মুহা. এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমির উপাধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম মুকুল, বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা মো. রেজাউল করিম প্রমুখ।