Image description

অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বাগমারায় রাজনৈতিক মদদপুষ্ট সিক্স স্টার বাহিনী। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই বাহিনীর চাঁদাবাজি, জমি ও পুকুর দখল এবং নির্যাতনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ।

এ বাহিনীর সদস্যদের ধারালো অস্ত্রের নৃশংস আঘাতে রোববার গভীর রাতে গুরুতর আহত হয়েছেন রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম আরিফুল ইসলাম। 

 

সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যরা এ সময় তাণ্ডব চালিয়ে আরিফের রেস্টুরেন্টে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে।

থানায় মামলা করতে যাওয়ার কারণে রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাহেরপুরে তার বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। আরিফের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি তার ওপর হামলা এবং রেস্টুরেন্টে ভাঙচুরের সঙ্গে তাহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আনম শামছুর রহমান মিন্টুর মদদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

একটি পুকুর খননের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৃশংস এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণেরও ঘটনা ঘটে। এ সময় আলম এবং বারিক নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও একটি সূত্রের দাবি। ঘটনার পর থেকে ওই দুই যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের গুম করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে যুবদল নেতা আরিফ বর্তমানে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোববার রাতে তিনি বিএনপি নেতা মিন্টুসহ তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্য চারজনের নাম উল্লেখ করে ও ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বাগমারা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

যুবদল নেতা আরিফ থানায় অবস্থানকালে রোববার দিবাগত রাতে তার তাহেরপুরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যরা। এসব ঘটনায় বাগমারাজুড়ে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তাহেরপুরের পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর উপজেলার ঝিনার মোড় এলাকার একটি বিলে পুকুর খনন চলছে। তাহেরপুরের বিএনপি নেতা মিন্টুর ক্যাডার বাহিনী এ পুকুর খননের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ। বিলের জমির মালিকদের সঙ্গে কথা না বলে এবং লিজের টাকা না দেওয়ায় এলাকার যুবক আলমসহ স্থানীয় কৃষকরা পুকুর খনন করতে বাধা দেন। আলম তার ঘনিষ্ঠ বাগমারার বড়বিহানিলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবদল নেতা মাহমুদুল রহমান মিলন এবং তাহেরপুর পৌর যুবদলের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জিল্লুর রহমানসহ কয়েকজনকে ডাকেন।

এ সময় সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুললে সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ বাহিনীর সদস্য রাসেল ফরাসিসহ কয়েকজন এ সময় পিস্তল বের করে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। আলম এবং বারিক নামের দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। আহত হন আরও কয়েকজন এলাকাবাসী।

এরপর রাত ৩টার সময় সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে তাহেরপুর চলে আসে। এ বাহিনীর সদস্যদের ধারণা, যুবদল নেতা আরিফের নির্দেশে তাদের বাহিনী এলাকাবাসীর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। তারা তাহেরপুরে পৌঁছেই আরিফের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গিয়ে হামলা করে। এ সময় আরিফ তার রেস্টুরেন্টে অবস্থান করছিলেন।

যুবদল নেতা আরিফ বলেন, আমি রাতে রেস্টুরেন্টে ছিলাম। এ সময় সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্য তাহেরপুর পৌর কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল ফরাসি, তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক আহবায়ক আবু বাশার, বর্তমান আহবায়ক ওহাব সর্দার এবং ছাত্রদল কর্মী লিখন আমার ওপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে। এ সময় রাসেল এবং বাসারের হাতে পিস্তল ছিল। ওহাবের হাতে ছিল চাপাতি। আর লিখনের হাতে ছিল রড। এ সময় রাসেল এবং বাসার আমাকে পিস্তল দিয়ে মারে। ওহাব চাপাতি দিয়ে কোপায়। আর লিখন রড দিয়ে পেটায়। আমার বাম চোখের নিচের অংশে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। মাথায়, পিঠে এবং হাত ও পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি।

আরিফ বলেন, হামলার সময় আমি চিৎকার করছিলাম। সেই সময় তাহেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির একটি পিকআপ আমার রেস্টুরেন্টের নিচে ছিল। চিৎকার শুনে পুলিশ সদস্যরা আমার রেস্টুরেন্টে উঠে আসলে সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়। তবে এর পাঁচ মিনিট পরেই রাসেল ফরাসির নেতৃত্বে আবারও ১৫-২০ জনের সশস্ত্র একটি দল রেস্টুরেন্টে এসে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা আমার রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন আসবাবপত্র এবং ডেকোরেশন ভাঙচুর করে। এর ফলে আমার ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে আমি প্রাণ রক্ষার্থে কৌশলে পালিয়ে যাই। এরপর রেস্টুরেন্টের পাশেই একটি বাড়িতে আত্মগোপন করি। আমি ১৭ বছর রাজপথে বিএনপির জন্য রক্ত দিয়েছি। এখন দলের নেতাকর্মীরা আমারই রক্ত ঝরাচ্ছে। এর থেকে অমানবিক আর কি-ই বা হতে পারে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা আনম শামসুর রহমান মিন্টু বলেন, আরিফের ওপর হামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার কোনো বাহিনী নেই। আমি সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না। সাধারণ জীবনযাপনে আমি অভ্যস্ত। যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

যুবদল নেতার ওপর হামলা, রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর, দুইজন গুলিবিদ্ধ ও নিখোঁজের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়। তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম বলেন, একজনের ওপর হামলা এবং রেস্টুরেন্টে ভাঙচুরের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। তবে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কিনা জানা নেই। মামলা রেকর্ড করার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।