Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে বিপাকে পড়েছেন ছোট দলগুলোর বড় নেতারা। দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিতে পারে না। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দলগুলোকে সময় দিতে হবে। নিবন্ধিত নতুন দলগুলোর প্রতীক এখনো জনসাধারণের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেনি। তাঁরা জোটপ্রধানের প্রতীকেই আগামীতে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। আর এ সমস্যার সমাধান নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষ করে বিএনপি ২৩৭ আসনে তাদের দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর সারা দেশে নির্বাচনি হাওয়া বইছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে লড়াই করা দলগুলোকে আসন ছাড় দিচ্ছে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নিজ প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্তে মিত্র দলগুলোর আসন চূড়ান্ত করতে পারছে না। নির্বাচনে জয়ের শতভাগ নিশ্চয়তা চান বিএনপির মিত্ররা। আসন ছাড় পাওয়ার পর প্রতীক হিসেবেও ধানের শীষে নিতে চায় বেশির ভাগ দলগুলো। তাদের ধারণা, এর ফলে ভোটের মাঠ ও জয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকিমুক্ত থাকা যাবে। তবে আইনে বাধ্যবাধকতা তৈরি হলে সরাসরি বিএনপির প্রার্থী হতেও আপত্তি নেই অনেকের। অন্যদিকে শরিকদের মধ্যে নিবন্ধন না থাকা দলগুলোর প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করবেন।

জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র সাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চও বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ ভোটে অংশ নিতে চায়। বিএনপি যেসব আসন ফাঁকা রেখেছে তার বেশ কিছুতে মিত্রদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে কৌশল বা স্থানীয় কোন্দলের কারণে এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। পরে এসব আসনের প্রার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোতে অনেক পরিচিত মুখ রয়েছেন। জোটগতভাবে ভোট করবে কি না তা এখনো স্পষ্ট না করলেও নিজস্ব প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে জামায়াতসহ দলগুলো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘নিবন্ধিত দলগুলোর যাদের প্রতীক আছে তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করা উচিত। কিন্তু আমি একই সঙ্গে মনে করি এজন্য দলগুলোকে সময় দেওয়া দরকার। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে এমনটা করা খুব বিবেচনার কাজ হবে না।’

২০১৮ সালে ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। পার্থ জানান, তিনি দলীয় প্রতীক গরুর গাড়ি নিয়ে নির্বাচন করবেন। তবে কমিশনের নিয়মে যদি সুযোগ থাকে তাহলে জোটের প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করবেন।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। ২০১৮ সালেও তিনি এ আসন থেকে ভোট করেন ধানের শীষ প্রতীকে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক হিসেবে এবারও ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ধানের শীষে নির্বাচন করবেন।

সম্প্রতি নিবন্ধন পেয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। প্রতীক আম। নিজস্ব প্রতীক থাকা সত্ত্বেও ধানের শীষে নির্বাচন করতে চান দলের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমি এলাকায় কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি ধানের শীষের বিকল্প নেই। ধানের শীষ হলে আমার কাজ করতে সুবিধা হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নামবেন। এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করে আসছি। ধানের শীষ নিয়ে ভোট করলে পাস করা সহজ হবে।’

ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম। এ দলের প্রতীক সিংহ। ববি হাজ্জাজের জন্য ঢাকা-১৩ ও দলের মহাসচিব মোমিনুল আমিনের রাজবাড়ী-২ আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। মোমিনুল আমিন জানান, তাঁরা জোটের প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করতে চান। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রতীক এখনো জনসাধারণের কাছে পরিচিতি পায়নি। বিএনপি আসন ছাড় দিলেও ধানের শীষ প্রতীক না থাকলে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঠিকভাবে নির্বাচনি মাঠে পাওয়া যাবে না। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় দলগুলো নানান সময়ে ছোট ছোট দলকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করে। এরপর নির্বাচনের আগে নির্বাচনি জোট হয়। কিছু কিছু দল রয়েছে যাদের ঢাকাকেন্দ্রিক বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক গ্রহণযোগ্যতা বেশি। এসব ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান মানুষের কাছে জনপ্রিয় হলেও নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে তাঁর দলের প্রতীক খুব বেশি পরিচিত নয়।

তাই জোট হলে ছোট দলগুলোর প্রার্থীরা বড় দলের প্রতীকে ভোটে লড়াই করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আবার অনেকে নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে চান। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর আসনকেন্দ্রিক জনপ্রিয়তাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।

কিন্তু এবারের সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের লড়াই করতে হবে নিজ দলীয় প্রতীকে। নতুন এ আদেশ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে জোট গঠন ও ভোটের লড়াইয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদরা।