
১. বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে তার ভাই আহত হয়েছে। একটি দলের মহাসচিবের এলাকায় এই ঘটনা হতাশাজনক। বিএনপির আভ্যন্তরিন পরিস্থিতি কতটা খারাপ এটা তার সর্বশেষ উদহারন। বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি ভেতর থেকে ভেঙ্গে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে তারেক রহমানকে অবিলম্বে দেশে আসা উচিত। তাকে যারা দল ও দেশের পরিস্থিতি অবগত করছেন সেখানে ঘাটতি আছে। মাঠে এসে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
২.
বিএনপি বার বার বলছে যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনুন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোককে বহিস্কার করা হয়েছে। দেশে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেফতার করছে না। ম্যাজেস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে সেনাবাহিনী মাঠে আছে- কিন্তু চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি - যুবদলের কাউকে গ্রেফতার করেছে এমন কোনো খবর নেই। অথচ সেনাবাহিনী মাঠে নামার আগে তাদের হাতে তালিকা থাকার কথা। আবার চাঁদাবাজির অভিযোগে কাউকে আটক করলে বিএনপি তার মুক্তির দাবি করে আন্দোলন করবে এমন পরিস্থিতিও নেই। তারপরও কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা এক বিরাট রহস্য।
৩.
দেশের এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ম্যাচিউর ভুমিকা পালন করছে ছাত্রদল। এখন পর্যন্ত ছাত্রদল কোথাও সংঘর্ষ জড়ায়নি, হল দখল করেনি। এর প্রধান কারন ছাত্রদলকে শিবির ও বাগছাসের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। সাধারন ছাত্রদের সমর্থনের জন্য কল্যানমুলক কর্মসূচী দিতে হচ্ছে। এ ধারা বজায় রাখতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদলের প্রতি সাধারন ছাত্রদের সমর্থন আগামিতে বাড়বে।
৪.
এর বিপরীতে যুবদলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। ফাঁকা মাঠে যুবদল একাই গোল দিয়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। এদের সাথে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কারো কারো সংযোগ থাকতে পারে। বিএনপির উচিত যুবদলের কার্যক্রম সাময়িক ভাবে বন্ধ করে যুবদল পুর্নগঠন করা।
৫.
জামাত ও এনসিপি যদি মনে করে বিএনপির ভেতরের সংকট থেকে তারা লাভবান হবে - এ চিন্তা ভুল। মনে রাখতে হবে একটি দূর্বল বিএনপি দেশের জন্য বড় সংকট তৈরি করতে পারে। রাষ্ট্র পরিচালনার মতো প্রস্তুতি জামাত- এনসিপির নেই। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ইসলামপন্থীদের বিজয়ের পর সে সব দেশে কী ঘটছে তা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মিশরের চেয়ে বাংলাদেশের চিত্র আরো জটিল ও ঝুকিপূর্ন। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ তুরস্ক নয়। এরদোয়ান পরিস্থিতি তৈরি করতে কত সময় নিয়েছে সে দিকে তাদের খেয়াল রাখা উচিত। জামাতের উচিত নির্বাচনে আসন বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হওয়া। বিএনপির বিরুদ্ধে গলা উচুঁ করে বক্তব্য দিয়ে আখেরে তাদের লাভ হবে না।
৬.
বিদেশ থেকে বিএনপির পক্ষে যে সোশাল ইনফ্লুয়েন্সার হিসাবে নিজেদের পরিচিত করছে তারা বিএনপির জন্য সংকট বাড়াচ্ছেন। তাদের বক্তব্যকে অনেকে বিএনপির বক্তব্য বলে ধরে নিচ্ছেন। এতে সাধারন মানুষ বিশেষ করে ছাত্ররা বিএনপির ওপর ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন। যেমন একজন বলছেন ব্যালটে নৌকা প্রতীক ও ইনক্লিুসিভ ইলেকশন দরকার। এখানে ইনক্লুসিভ বলতে আলীগকে বোঝাচ্ছেন। এটা তার নিজস্ব চিন্তা হতে পারে। কিন্তু অনেকে মনে করবেন এটাই হয়তো বিএনপির চিন্তা। এদের সাথে বিএনপির সর্মপক পরিস্কার করা দরকার।
৭.
বিএনপি যে দল হিসাবে খাদের মধ্যে পড়েছে তা বোঝা খুব কঠিন বিষয় নয়। এরপরও বিএনপিকে জাতীয় অভিভাবকের ভুমিকায় আসতে হবে। কারন বিএনপি দেশের এখন এক নম্বর রাজনৈতিক দল। বেগম খালেদা জিয়ার মতো মহীরুহ এখনও বিএনপির চেয়ারপার্সন। বিএনপিকে এই বার্তা দিতে হবে জামাত ও এনসিপিকে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করে না। জামাত ও এনসিপির সমালোচনামুলক বক্তব্য বিএনপি নেতারা যত বেশি দেবে তা বিএনপির দূর্বলতা হিসাবে মানুষের সামনে ফুটে উঠবে।
৮.
জামাত এনসিপিকে মনে রাখতে হবে ফ্যাসিবাদের সব কাঠামো এখনও বহাল আছে। ইনডিয়া ওৎপেতে আছে। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে তারাই আলীগ ও ইনডিয়ার প্রধান টার্গট। আজও আলীগের ফেসবুক পেজে বিএনপির লোগে দিয়ে লেখা হয়েছে জাতীয় মবপার্ট। যারা বিএনপিকে ইনক্লুসিভ ইলেকশনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা হয়তো জানেন না গ্রামে, গঞ্চে উপজেলা শহর থেকে আলীগকে তাড়িয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আলীগ ফিরলে তারাই প্রথম আক্রান্ত হবে। অনেক এলকায় জামাত- এনসিপি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এমন সিদ্ধান্ত নিলেও মাঠের নেতারা তা মানবে না।
৯. ফ্যাসিবাদ তাড়ানোর শক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা যেনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রুপ না নেয় সে ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকুন। বিদেশে বসে বহু তত্ব দেয়া যায় কিন্তু মাঠের বাস্তবতা সম্পুর্ন ভিন্ন।
আলফাজ আনাম