Image description

তেহরানে ইসরায়েলের একটি হামলায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আহত হয়েছিলেন বলে দাবি করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত ১২ দিনের যুদ্ধের মধ্যে গত ১৬ জুন পেজেশকিয়ানের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে।

আজ রোববার (১৩ জুলাই) ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের ঘনিষ্ঠ ফার্স নিউজ এজেন্সির বরাতে আমিরাতভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, ওই দিন ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক চলাকালে হামলাটি হয়েছিল। ওই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের পাশাপাশি ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের কালিবাফ ও প্রধান বিচারপতি গোলাম-হোসেইন মোহসেনিও উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার সময় ভবনটির নির্গমনপথ আটকে দিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা ব্যবহার করা হয়। তবে কর্মকর্তারা আরেকটি জরুরি পথ দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ সময় পালাতে গিয়েই প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান তাঁর পায়ে সামান্য আঘাত পান।

হামলাটি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে পরিচালিত হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকের তথ্য ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে ফাঁস করে দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ফার্স।

ইরান ও ইসরায়েল উভয় দেশই স্বীকার করেছে, যুদ্ধের সময় ইরানের ভেতরে ইসরায়েলি গুপ্তচরেরা সক্রিয় ছিলেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইরান মোসাদসংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড়ও চালায়। ধরা পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হামলার ধরন ছিল অনেকটা গত বছরের সেপ্টেম্বরে লেবাননের বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ওপর পরিচালিত অভিযানের মতো। তবে তেহরানের হামলাটি ঠিক কোথায় ঘটেছিল, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

এদিকে গত সপ্তাহেই মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। তবে ওই হত্যাচেষ্টাটি সাম্প্রতিক যুদ্ধেই ঘটেছে কি না, তিনি সে সময় স্পষ্ট করে বলেননি। হত্যাচেষ্টা নিয়ে কার্লসনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তারা চেষ্টা করেছিল। তারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও নেয়, কিন্তু ব্যর্থ হয়।’

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের ওপর আকস্মিক বিমান হামলা শুরু করে। পরে দুই দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত একটি যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ইসরায়েল ইরানের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পরমাণুবিজ্ঞানীদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছিল। যুদ্ধের প্রথম দিনই নিহত হন ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি ও সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানান, তাঁরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে সুযোগ না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। সংঘাতের সময় ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার খামেনিকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন।

এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি অংশ নেয় এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সময় তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেন।