Image description
 

একটি দেশ তখনই শক্তিশালী ও গতিশীল হয়, যখন তার তরুণ প্রজন্ম শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, বরং রাজনৈতিক আঙিনাতেও সচেতন ও সক্রিয় থাকে। রাজনীতিকে সাধারণ মানুষের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো প্রক্রিয়া হিসেবে দেখার প্রবণতা আজ পরিত্যাজ্য। মূলত, রাজনীতিই সেই চালিকাশক্তি যা একটি দেশের শিক্ষা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো প্রতিটি মৌলিক খাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে, তরুণদের জন্য রাজনৈতিকভাবে সচেতন থাকাটা আজ কেবল একটি নাগরিক দায়িত্ব নয়, বরং নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য এক অনিবার্য প্রয়োজন।

 


রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবে তরুণরা প্রায়শই নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকে। যখন তরুণরা রাজনীতিবিমুখ হয়, তখন অন্য প্রজন্মের বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত তাদের জীবন ও ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করে। একটি সচেতন তরুণ জানে, কেন সরকারের কর্মসংস্থান নীতি, শিক্ষার বাজেট বা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আইন তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা ভোটকে শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখে না, বরং তাদের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে। নিজেদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর পূর্ণ নজরদারি রাখা অপরিহার্য।


গণতন্ত্রে সরকার বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি জনগণের আস্থা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। তরুণ প্রজন্ম তাদের সংখ্যাগত শক্তি এবং প্রযুক্তিনির্ভরতাকে এই কাজে ব্যবহার করতে পারে। প্রযুক্তি-সচেতন তরুণরা সহজেই সরকারি প্রকল্পের তথ্য, নেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং তাদের কার্যকারিতার ওপর নজর রাখতে পারে। এই সামাজিক নজরদারি প্রশাসনকে আরও স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য করে। সচেতন তরুণ কেবল ভোট দেয় না, বরং তারা ভোট দেয় যোগ্যতা, সততা ও কর্মসূচির ভিত্তিতে, যা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনে।

 


তরুণরা সমাজের সবচেয়ে প্রগতিশীল অংশ। তারা সাধারণত পুরাতন সামাজিক বৈষম্য, গোঁড়ামি ও লিঙ্গভেদের মতো বিষয়ে দ্রুত পরিবর্তন আনতে আগ্রহী। রাজনৈতিকভাবে সচেতন তরুণরা কেবল নিজেদের সুবিধা নয়, বরং সমাজের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়। তাদের সচেতনতা নিশ্চিত করে যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত হবে, যা সমাজে স্থিতিশীলতা আনে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সহায়ক হয়।

 


সচেতন তরুণ নেতৃত্ব কেবল স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক লাভের জন্য কাজ করে না। তারা পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণে উৎসাহী হয়। তারা জানে, আজকের একটি ভুল নীতি আগামী প্রজন্মের জন্য কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এবং মানসম্মত শিক্ষার প্রসার—এই সমস্ত বিষয় তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতার মাধ্যমেই নীতিতে স্থান পায়।


তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা হলো দেশের উন্নতির জন্য সবচেয়ে বড় মূলধন ও রক্ষাকবচ। এটি কেবল অধিকার আদায়ের প্রক্রিয়া নয়, বরং দেশের প্রতি একটি নৈতিক দায়িত্বও বটে। একটি সুস্থ ও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য, যেখানে দুর্নীতি কমবে, সুযোগের সমতা থাকবে এবং দেশের উন্নয়ন টেকসই হবে, সেখানে তরুণদের সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া এবং সচেতন থাকা আজ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।

শেখ ফরিদ

কবি ও গণমাধ্যমকর্মী