মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছেন। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা খাতে যুক্তরাষ্ট্র দেবে মাত্র ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার।
সোমবার ( ) প্রকাশিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এই ২০০ কোটি ডলার একটি তহবিল হিসেবে গঠন করা হবে। তহবিলটি নির্দিষ্ট দেশ ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় ব্যয় করা হবে। প্রাথমিক তালিকায় বাংলাদেশ, কঙ্গো, হাইতি, সিরিয়া ও ইউক্রেনসহ মোট ১৭টি দেশের নাম রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের এই বরাদ্দ সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আগের বছরগুলোতে দেশটি সর্বোচ্চ ১৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ছিল স্বেচ্ছা অনুদান।
ক্ষমতায় ফিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে বৈদেশিক সহায়তা কমানোর ঘোষণা দেন। সমালোচকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ আশ্রয়, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়েছে।
২০০ কোটি ডলারের এই তহবিলের সম্ভাব্য সুবিধাভোগী দেশের প্রাথমিক তালিকায় আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনের নাম নেই। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ফিলিস্তিনের জন্য সহায়তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ‘গাজা পরিকল্পনা’ থেকে দেওয়া হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জাতিসংঘে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থায়ন কমে যাওয়ায় চলতি মাসের শুরুতে সংস্থাটি ২০২৬ সালের জন্য ২৩ বিলিয়ন ডলারের একটি জরুরি আবেদন জানায়। মানবিক সহায়তা বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় এই অঙ্ক প্রায় অর্ধেক। গত জুনে জাতিসংঘ সতর্ক করে জানায়, আন্তর্জাতিক সহায়তা খাতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থ হ্রাস ঘটেছে। এর ফলে একাধিক বড় কর্মসূচি বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রমের প্রধান সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড)। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সংস্থাটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বার্তা দেওয়া হয়েছে—‘ছোট হও, নয়তো বিলুপ্ত হও।’
জার্মানিসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশও মানবিক সহায়তার অর্থে বড় ধরনের কাটছাঁট করেছে। এর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকাজুড়ে ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) জানায়, অর্থ সংকটের কারণে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি শরণার্থী সহায়তা হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সে সময় সংস্থাটি তাদের ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের মাত্র ২৩ শতাংশ অর্থ পেয়েছিল।
বাজেট সংকটের কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মৌলিক সেবা ভেঙে পড়ার ঝুঁকির কথাও জানিয়েছিল ইউএনএইচসিআর। আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।