পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চললেও সম্প্রতি সাধারণ পাহাড়িদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টির চক্রান্তে লিপ্ত হচ্ছেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়েন ইয়েন। দেশের বাইরে বসে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইন্ধন দিচ্ছেন ইয়েন ইয়েন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় থেকে সাধারণ উপজাতিদের মধ্যে বাঙালিবিদ্বেষী মনোভাব সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক উসকানি ও সেনাবাহিনীবিরোধী অপপ্রচারসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকায় লিপ্ত রয়েছেন। পাহাড়ে বসবাসকারী বেশ কয়েকজন সাধারণ বাঙালি ও উপজাতি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি ২০১৪ সালের ৪ জুলাই ইয়েন ইয়েনকে বিয়ে করেন। জাতিগতভাবে ইয়েন ইয়েন রাখাইন সম্প্রদায়ের। এ ছাড়া বান্দরবানের উজানিপাড়া ও ঢাকার শেওড়াপাড়ায় তার পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে। ইয়েন ইয়েন আগে বান্দরবানে ‘পিস’ নামে একটি এনজিও পরিচালনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। চাকমা সার্কেল চিফের সাথে বিয়ের পর তিনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী বিশেষ করে ইউপিডিএফের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের উসকানি দিচ্ছেন।
ইয়েন ইয়েনের বিতর্কিত কার্যকলাপের তথ্য : বিয়ের পর থেকেই উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করে আসছেন তিনি। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে বসবাসকারী ৪৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে উপজাতি হিসেবে অভিহিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ‘উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণিত আছে এবং আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের বিভিন্ন ধারায় ‘উপজাতি’ শব্দটি বলবৎ থাকবে বলে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ রয়েছে। তারপরও ইয়েন ইয়েন পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করে উপজাতিদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের চেষ্টাসহ বিভিন্ন অপতৎপরতায় নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
উপজাতি নারীদের ধর্ষণের দায় বাঙালিদের ওপর চাপানো : পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত যেকোনো ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় ইয়েন ইয়েন খুব দ্রুত বাঙালিদের ওপর প্রত্য বা পরোভাবে দোষ চাপিয়ে থাকেন। তার এই একপীয় অবস্থান অনেকসময় বাস্তব ঘটনা, প্রমাণ বা তদন্তের ফলাফলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। এমন আচরণ শুধু ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না; বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা ও পারস্পরিক বিরোধ আরো বাড়িয়ে তোলে। ইয়েন ইয়েনের এমন প্রবণতা পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক শান্তি, সহাবস্থান ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার পরিবেশ তিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করে, যা সমস্যা সমাধানের বদলে পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলছে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিতে ইন্ধন : পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালিদের মাঝে যখনই কোনো সামাজিক, প্রশাসনিক বা ব্যক্তিগত ইস্যু তৈরি হয়, তখন ইয়েন ইয়েন ওই পরিস্থিতিকে এজেন্ডা বাস্তবায়নের স্বার্থে ব্যবহার করে দু’পরে মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলেন। তিনি বিভিন্ন ঘটনার প্রকৃত কারণ বা তথ্য গোপন রেখে একপীয় ব্যাখ্যা দিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বাঙালিদের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করেন, যেন সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের প্রচারণা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর ফলে ছোটখাটো সমস্যাও বড় আকারে সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাতে রূপ নেয়। ফলে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন তথা নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়ে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ইয়েন ইয়েন বিভিন্ন অপ্রমাণিত ইস্যুকে কেন্দ্র করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে উপজাতিদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনেরও অপচেষ্টা করে থাকেন।
ধর্মীয় ইস্যু কেন্দ্র করে উসকানি : পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সংবেদনশীল সামাজিক ও ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে ইয়েন ইয়েন পাহাড়ি-বাঙলি সম্প্রদায়ের মধ্যে সঙ্ঘাত সৃষ্টিতে এখনো লাগাতার উসকানি দিচ্ছেন। এ েেত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি মুসলিমদের ওপর পরোভাবে বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করার মাধ্যমে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী উপজাতিদের উসকানি প্রদান করেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুকে প্ররোচনামূলকভাবে উপস্থাপন করেন। সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস সৃষ্টির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অস্থিতিশীল করার েেত্র বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে থাকেন। তার এহেন কর্মকাণ্ড পার্বত্য এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সামাজিক সংহতি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
উপজাতি যুবকদের আন্দোলনে ইন্ধন : গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ইয়েন ইয়েন কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি ছাত্র ও যুবকদের দ্বারা বেশ কিছু বড় সভা-সমাবেশের আয়োজন করে পার্বত্য অঞ্চলের পরিবেশকে উত্তপ্ত করেন বলে জানা গেছে। যেখানে উপজাতি-বাঙালি সংঘর্ষে বেশকিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
বিলাইছড়িতে মারমা কিশোরীর কথিত ধর্ষণ : ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে মারমা কিশোরীর কথিত ধর্ষণের ঘটনায় আদালতের আদেশ অবমাননা ও সেনাবাহিনীবিরোধী অপপ্রচারে ভূমিকা ছাড়াও ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারিতে বিলাইছড়ি জোনের ফারুয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে উরাইছড়ি উত্তরপাড়া এলাকায় একটি এলআরপি পরিচালনা করার সময় দুইজন উপজাতি মারমা কিশোরীকে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক ধর্ষণের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে উপজাতীয় নারীদের ব্যবহার করে স্পর্শকাতর বিষয়টিকে ইস্যু করার জন্য ইয়েন ইয়েন মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়াও আদালতের আদেশ সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে ইয়েন ইয়েন কয়েকজন কর্মীকে সাথে নিয়ে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রবেশ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ কর্তৃক মারমা কিশোরীদ্বয়কে তার পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বাধা দেন। কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনীবিরোধী কার্যকলাপ : বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ও বাঙালিদের বিতাড়িত করার পাশাপাশি সেনা প্রত্যাহারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের ল্েয ইয়েন ইয়েন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বিতর্কিত এবং মিথ্যা ইস্যুকে কেন্দ্র করে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন, সভা-সমাবেশ আয়োজন ও মানববন্ধন করে থাকেন। এ ছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও, সংস্থার প্রতিনিধির কাছে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীবিরোধী বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেন। এতে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা তিগ্রস্ত হয় ।
সেনাবাহিনীর ওপর দায় চাপানো : পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত যেকোনো নাশকতামূলক ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করার আগেই ইয়েন ইয়েন বিশেষ একটি প নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত। এ েেত্র তার উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পোস্টগুলো অধিকাংশ েেত্র ইউপিডিএফ (মূল) দলের অনলাইন একটিভিস্ট এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। অধিকাংশ েেত্র উপজাতিরা তার কাছে সহায়তার জন্য না গেলেও সে নিজে ডেকে নিয়ে, উপস্থিত হয়ে সংঘটিত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করে থাকেন। এরপর পার্বত্যাঞ্চলে সংঘটিত সহিংসতার প্রমাণিত, অপ্রমাণিত সব ধরনের নাশকতার েেত্র তিনি সরাসরি সেনাবাহিনীর ওপর দায় চাপিয়ে দেন।
ইউইউ দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সেনাবাহিনী ও বাঙালি বিরোধী অভিযোগ : রাঙ্গামাটি সফরকালীন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দূতাবাসের প্রতিনিধিদের কাছেও সেনাবাহিনী ও বাঙালি বিরোধী অভিযোগ উত্থাপন করেন। গত বছরের ১ থেকে ৩ জুলাই ঢাকাস্থ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দূতাবাসের তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল ট্যাংগা এনজিও অফিসে আলাপকালে ইয়েন ইয়েন অভিযোগ করে বলেন, বিগত ২৭ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কোনো ধারা বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটছে। এ জন্য তিনি বিশেষভাবে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দায়ী করেন। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। তা প্রত্যাহার না করে বরং আরো ক্যাম্প বৃদ্ধি করা হয়েছে। আদিবাসীদের জমি বিভিন্ন স্থানে বাঙালিরা দখল করছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় একটি অ্যাডভোকেসি সেল তৈরি করে তার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্যগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে প্রস্তাব করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব মিডিয়া সরকার নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তেমন প্রচার হয় না বলেও অভিযোগ করেন।
আন্তর্জাতিক মহলে দেশবিরোধী অপপ্রচার : আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করছেন ইয়েন ইয়েন। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দাবি নিয়ে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে নানা ধরনের অপপ্রচার ও তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিদেশে অনুষ্ঠিত সেমিনার ও সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন এবং রাষ্ট্রীয় নীতি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি বিদেশী সংগঠন, মানবাধিকারভিত্তিক গ্রুপ ও প্রবাসী মহলের কিছু অংশকে দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি রিঙ্কেন ইয়েন ইয়েনকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত বিভিন্ন সহিংসতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিগোচর করায় বর্ণ বৈষম্যবিরোধী বৈশ্বিক চ্যাম্পিয়নের-২০২৩ পুরস্কার প্রদান দেন। এ ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ফেলোশিপে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে আসছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড : পার্বত্য চট্টগ্রামে সৃষ্ট নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ইয়েন ইয়েন এবং পিটি চাকমার (প্রজ্ঞা তাপস চাকমা) উসকানি গত ৩০ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ইয়েন ইয়েন কর্তৃক খাগড়াছড়ি ও গুইমারাতে প্রদান। গুইমারাতে গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ইন্ধন ও উসকানি দেন। এ ছাড়াও ঘটনায় ইয়েন ইয়েনের পাশাপাশি পিটি চাকমা (কানাডা প্রবাসী ইউপিডিএফ মূলের মিডিয়া পার্টনার) উপজাতিদের উসকানি প্রদান করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। মূলত ইয়েন ইয়েন এবং পিটি চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত যেকোন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে উপজাতিদের উসকানি দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে তিগ্রস্ত করে।
ইউপিডিএফ (মূল) দলের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা : ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ (মূল) দলের তিনটি নারী অঙ্গসংগঠনের অধিবেশনে ইয়েন ইয়েন প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, যা হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্তৃক প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি হতে জানা যায়। ওই অনুষ্ঠানে তিনি তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শামিল হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। তিনি রাঙ্গামাটি জেলা ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে তার নিজের বলে দাবি করার পাশাপাশি রাঙ্গামাটির। প্রতিটি এলাকা ও জমি তার নিজের বলে দাবি করেন। তিনি নিজেকে রানী হিসেবে দাবি করেন এবং প্রশাসন তার যোগ্য সম্মান দিতে পারেনি বলেও অভিযোগ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি সংবেদনশীল অঞ্চল। সেখানে যেকোনো ঘটনা বা অভিযোগ আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপনের েেত্র দায়িত্বশীলতা ও তথ্য যাচাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একপাকি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা শুধু দেশের ভাবমর্যাদাই ক্ষুণ্ন করে না, বরং অভ্যন্তরীণভাবে সহাবস্থান, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও ঝুঁকি তৈরি করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম শাহীদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলার সময় দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাচাই ছাড়া অভিযোগ, একপাকি তথ্য উপস্থাপন কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীকে সরাসরি অভিযুক্ত করার প্রবণতা কূটনৈতিকভাবে দেশের জন্য তিকর হতে পারে। এতে একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা আন্তর্জাতিক রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়।
তিনি আরো বলেন, মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হতে পারে, তবে সেটি হতে হবে তথ্যনির্ভর, প্রমাণভিত্তিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রোপট বিবেচনায় রেখে। নইলে এ ধরনের তৎপরতা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও দেশবিরোধী শক্তিকে সুবিধা করে দেয়। তাদের এই তৎপরতায় নিশ্চয় কোনো উদ্দেশ্য আছে
রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, পার্বত্য ইস্যুতে ভিন্নমত বা সমালোচনার সুযোগ থাকলেও, তা যেন বিদেশি মহলে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় রূপ না নেয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। এ েেত্র তথ্যভিত্তিক আলোচনা, আইনি কাঠামো এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নটি সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে ইয়েন ইয়েন চাকমার নির্ধারিত মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।