ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের আপাতত বিবেচনায় রাখছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে ইসলামী ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তার অবসান হচ্ছে। যদিও এই খাত থেকে ১০ শতাংশ জনবল রিজার্ভ তালিকায় রাখতে আগ্রহী ইসি।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এমন ইঙ্গিত দেন। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের কক্ষে কমিশনের সভা হয়।
সভা শেষে সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছি। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপাতত বিবেচনায় নিচ্ছি না। তারা রিজার্ভে থাকবে, একান্ত জরুরি না হলে তাদের নেওয়া হবে না।’
গত ২৩ অক্টোবর বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ৩৬ দফা কার্যপত্র জমা দেয়। সেখানে ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ট্রাস্টসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে না রাখার দাবি জানানো হয়।
বিএনপির অভিযোগ, এসব প্রতিষ্ঠান দলীয় প্রভাবাধীন এবং এদের দায়িত্বে রাখলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যদিও ২৮ অক্টোবর বিবৃতি দিয়ে জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সাংগঠনিক বা প্রশাসনিক সম্পর্ক নেই।’
গত ৩ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের এক পরিচালকের সঙ্গে জামায়াত নেতার কথোপকথনের ভিডিও ফাঁস হয়। এতে ইসলামী ব্যাংকের ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক আব্দুল জলিল, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব বণ্টন ও নিরাপত্তা নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বেসরকারি ব্যাংকের ১০ শতাংশ রিজার্ভ প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা রাখা হবে। তবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সংখ্যার ১০৫ শতাংশ হারে।’
তফসিলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে হবে প্রচারসামগ্রী
তফসিল ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যবহৃত সব ধরনের প্রচারসামগ্রী সরিয়ে ফেলতে হবে। এ নির্দেশ অমান্য করলে নির্বাচন আচরণবিধির আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন ইসি সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে যেসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টা টানিয়েছে, সেগুলোও তফসিলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে হবে। না সরালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আচরণবিধি নিশ্চিত করতে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মাঠে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতি উপজেলা বা থানায় দুজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের আগে তিন দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও পরের দিননহ মোট পাঁচ দিনে ম্যাজিস্ট্রেট আরও বাড়ানো হবে।
সানাউল্লাহ আরও জানান, নির্বাচনী এলাকায় অনুদান, ত্রাণ ও বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা বিতরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত পরিপত্র যথাসময়ে জারি করা হবে। তবে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা বা অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা অব্যাহত থাকবে।