রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সদ্য সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে এক নারী সহকর্মীকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশ্লীল ও আপত্তিকর ভিডিও ও বার্তা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই কর্মকর্তাকে কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদে বদলি করা হয়েছে। নারী কর্মকর্তার অভিযোগের পর তার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ডিআইজি আবু সুফিয়ান বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা। আরএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পদে দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগকারী নারী পুলিশ কর্মকর্তা ৩৫তম ব্যাচের এডিশনাল এসপি। তিনিও ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নারী পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে এরই মধ্যে ডিআইজি আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা তৈরি করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। মূলত গত ২৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-১ শাখা থেকে আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা জারি করার দুদিনের মধ্যে তাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তরে ডিআইজি পদে বদলি করা হলেও কোনো বিভাগে পদায়ন করা হয়নি তাকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আবু সুফিয়ান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওই নারী কর্মকর্তাকে একটি আপত্তিকর ও অশ্লীল ভিডিও ক্লিপ পাঠান। পরে এসব আপত্তিকর মেসেজিং ও অশ্লীল ভিডিও তিনি মুছেও ফেলেন, যা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডিআইজি আবু সুফিয়ানের কাছে পাঠানো অভিযোগনামায় বলা হয়, তিনি (আবু সুফিয়ান) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত থেকে একজন জুনিয়র নারী সহকর্মীকে অশ্লীল ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, যা নিতান্তই অকর্মকর্তাসুলভ এবং নৈতিকতা বিবর্জিত। তার এই অপেশাদার, অকর্মকর্তাসুলভ, নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যকলাপ পুলিশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে, যা সরকারি চাকরি বিধিমালা (শৃঙ্খলা ও আপিল) ২০১৮-এর বিধি অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগনামায় আবু সুফিয়ানকে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত অথবা অন্য কোনো উপযুক্ত দণ্ড প্রদান করা হবে না, তা অভিযোগ প্রাপ্তির ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি ব্যক্তিগত শুনানির ইচ্ছা পোষণ করেন কি না, সেটিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান কালবেলাকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠি তিনি গতকাল হাতে পেয়েছেন। সেটি পড়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন।
নারী কর্মকর্তাকে মেসেঞ্জারে অশ্লীল ভিডিও ও বার্তা পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অধীনস্থ ওই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে তার মাঝেমধ্যেই মেসেঞ্জারে হাই-হ্যালো হতো। এক রাতে তাই হচ্ছিল। একপর্যায়ে নারী কর্মকর্তার মেসেঞ্জার থেকে তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে অসংগতিপূর্ণ একটি ভিডিও আসে। সকালে তিনি বিষয়টি জানতে ওই নারী কর্মকর্তাকে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। এরপর তিনি রি-সেন্ড করে জানতে চেয়েছিলেন, কেন এই ধরনের ভিডিও পাঠানো হয়েছে? পরে বুঝতে পারেন, সেটি ফেক আইডি থেকে এসেছিল।’ ডিআইজি আবু সুফিয়ানের দাবি, অনেক আগে ঘটনাটি একবারই ঘটেছে। পরে তিনি তা মুছেও দেন।
অবশ্য ঘটনার শিকার নারী কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, তাকে বিভিন্ন সময়ই একতরফাভাবে আপত্তিকর ও অসংলগ্ন ভিডিও ও বার্তা পাঠানো হতো। যখন বিষয়টি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তিনি নির্ধারিত বিভাগীয় নিয়ম অনুসরণ করে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ওই স্যারকে চিনতাম না। ট্যুরিস্ট পুলিশে আমার পোস্টিং হওয়ার পর দেখা হলে সালাম বিনিময় ছাড়া কখনোই তার সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি, মেসেঞ্জারে যোগাযোগ তো দূরের কথা। ওই কর্মকর্তা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই একতরফাভাবে আমার কাছে অসংলগ্ন ও অপ্রাসঙ্গিক বার্তা পাঠাতে শুরু করেন।’