Image description
 

সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীতে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দী করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা সারাদেশেই ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে পথ কুকুর বা বিড়াল নির্যাতনের ঘটনা অহরহই দেখা যায়। কখনো বিরক্ত হয়ে, কখনও বা খেলার ছলে নিরীহ এই প্রাণীগুলোকে হত্যাকে সাধারণত কোনো অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না।

 

কিন্তু বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আসলে কী বলছে? এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের আদৌ কি সাজা হয়? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

প্রাণীদের সুরক্ষা দিতে ‘দ্য ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট' নামের একটি আইন দেশে প্রচলিত ছিল। ১৯২০ সালে প্রণয়ন হওয়া এই আইনটি ২০১৯ সালে বাতিল করা হয়। আইনটি প্রতিস্থাপিত হয় ‘প্রাণি কল্যাণ আইন’ নামে।

 

নতুন এই আইনটিতে কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া মামলা করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। অর্থাৎ প্রাণি নির্যাতনের কোনো ঘটনা হলে কোনো ব্যক্তি চাইলেই আইনি প্রতিকার পাবেন না বা মামলা করতে পারবেন না।

 

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাকিব মাহবুব জানান, এই আইনটির প্রয়োগ কোনো ব্যক্তির হাতে নেই।

এই আইনজীবী বলেন, ‘এখানে কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় আছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের কোনো ভেটেরিনারি সার্জন। মানে অধিদপ্তরের লোক ছাড়া আপনি মামলা করতে পারবেন না। মূলত প্রাণি কল্যাণ আইনের বাধা এখানে।’

সাকিব মাহবুব এক্ষেত্রে গতবছর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে ঘটা একটি প্রাণি নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, সে সময় প্রাণি কল্যাণ আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়নি। মামলা হয়েছিল ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর আওতায়।

পেনাল কোডের ৪২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রাণি হত্যা করে বা ক্ষতি করে এবং যে কোনো প্রাণির মূল্য যদি ৫০ টাকা বা তার বেশি হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে।

সাকিব মাহবুব বলেন, ‘একটি রাস্তার কুকুর বা বিড়ালের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ হবে? সেতো কারো মালিকানাধীন গবাদি পশু না। সেক্ষেত্রে এই ধারাও প্রমাণ করা কষ্টকর। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আসলে আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না। ফলে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইন থাকলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে।’

এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘কেননা সেখানেই মালিকবিহীন প্রাণি হত্যা করা যাবে না সেটা বলা হয়েছে। সেটা বলছে ঠিকই কিন্তু প্রয়োগ আবার নাগরিকের কাছে দেয় নাই। প্রয়োগ আবার অধিদপ্তরের কাছে। কর্তৃপক্ষ এমন কোনো মামলা করেছে তা আমার জানা নাই।’

মূলত প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ করা, সদয় আচরণ প্রদর্শন করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ অ-আমলযোগ্য এবং জামিনযোগ্য। পোষ্য এবং মালিকবিহীন—দুই ক্যাটাগরিতে প্রাণিকে ভাগ করা হয়েছে এই আইনে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মালিকবিহীন কোনো প্রাণি, যেসব কুকুর বা বিড়াল পোষা নয়, এমন পথকুকুর বা বিড়াল এমন প্রাণীকে কেউ যদি হত্যা করে তবে সেটা হবে অপরাধ, এই অপরাধে শাস্তির বিধানও আছে। প্রাণির প্রতি কি কি আচরণ নিষ্ঠুর হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা এই আইনের ছয় ও সাত ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। অঙ্গহানি করা এবং বিষ প্রয়োগে প্রাণি হত্যাকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’

তবে যদি কোনো প্রাণি সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকলে বা অনিরাময়যোগ্য অসুস্থ হলে, তাকে বাঁচিয়ে রাখা নিষ্ঠুরতা বলে মনে হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ক্রমে ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যাবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া পোষ্য বা পথকুকুর বা বিড়ালকে হত্যা, নির্যাতন বা তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করার আইনে সুযোগ নাই বলে মন্তব্য করেন মনজিল মোরসেদ।

এই আইনজীবী বলেন, ‘যদি কেউ এ সমস্ত ঘটনা করে তবে তার জন্য ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা জরিমানা। আর যদি দ্বিতীয়বার করে তাহলে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। এই শাস্তির বিধানটাও আছে। এই শাস্তি পোষ্য এবং মালিকানাবিহীন বা পথকুকুর বা বিড়াল উভয়ের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য।’

মনজিল মোরশেদ জানান, এই আইনের অধীনে প্রাণির প্রতি যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতও করতে পারবে। বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী, প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ সাজা দুই বছর।

সূত্র: ইনডিপেন্ডেন্ট।