Image description

একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের সিদ্ধান্তের কারণে ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর বিষয়টি ইতিমধ্যেই বিবেচনায় নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো এবার পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণ করা হবে। এতে ভোট গণনার কার্যক্রম নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ইসিকে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা, সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা এবং নির্বাচনের দিনে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পোস্টাল ভোটে তাদের ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন ন্যূনতম পঞ্চাশ লাখ ভোটারের রেজিস্ট্রেশন সুবিধা রেখে ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং’ (দেশের বাইরে) এবং ‘ইন কান্ট্রি ভোটিং’ (দেশের ভেতরে) ব্যবস্থা চালু করছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, পোস্টাল ব্যালটে আসা ভোটগুলো যেহেতু আসনভিত্তিকভাবে গণনা করা হবে, গণনা প্রক্রিয়া কী হবে, কোথায় হবে, কখন হবে এবং কীভাবে হবে— এসব বিষয় একটি জটিলতর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। পরে সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু পোস্টাল ব্যালটগুলো প্রতিটা আসনভিত্তিকভাবেই সংগ্রহ করা হবে, তাই প্রতিটি আসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত না করে বরং রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়েই গণনা করা হবে।

প্রতিটা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পোস্টাল ব্যালট সংরক্ষণ, ভোট গণনা এবং প্রতিটি আসনের সঙ্গে ভোট সমন্বয় করা হবে।

প্রতিটি আসনকে একটি কেন্দ্র হিসেবে গণনা করে তার জন্য একজন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রতিটি আসনের জন্য আসা পোস্টাল ভোট নির্ধারিত ব্যালট বক্সে রাখা হবে। অর্থাৎ কোনো আসনে যদি কেন্দ্র থাকে ১০০টি, তবে পোস্টাল ব্যালটের জন্য রাখা অতিরিক্ত কেন্দ্রসহ ওই আসনের কেন্দ্রের সংখ্যা হবে ১০১টি।

প্রতিটি আসনের জন্য ব্যালট বক্স পুরোটা ভরে যাওয়ার পরিস্থিতিতে এক বা একাধিক ব্যালট বক্স দেওয়া হবে, যেখানে ব্যালটের ২টি কাগজসহ খামটি ব্যালট বক্সে রেখে দেওয়া হবে। ভোট গণনা শুরু হলে প্রতিটি ব্যালট বক্স থেকে খাম বের করে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বা তার মনোনীত প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা করা হবে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি বা প্রার্থীর সামনে সমগ্র আসনের প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটের সঙ্গে এই ভোটগুলো যোগ করা হবে।

যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঢাকা স্ট্রিমকে বলেন, প্রতিটা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পোস্টাল ব্যালট সংরক্ষণ, ভোট গণনা এবং প্রতিটি আসনের সঙ্গে ভোট সমন্বয় করা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমরা প্রতিটি আসনে একটি বড় ব্যালট বক্স দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু যেহেতু এর (বিশেষায়িত ব্যালট বক্সের) কোনো উপযোগিতা থাকবে না—তাই আমরা বিকল্প চিন্তাভাবনা শুরু করি। প্রতিটি আসনকে একটি কেন্দ্র হিসেবে ধরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়েই ভোট গণনা করা হবে। প্রশ্ন ছিল— সাধারণ ব্যালট বক্সে ব্যালট ফেলার যে ফাঁকা জায়গা থাকে, তা দিয়ে ব্যালটের খাম ফেলা যাবে কি না। আমরা এটি পরীক্ষা করে দেখব। যদি না যায়, কিছুটা মডিফাই করা হতে পারে।

আমরা (নির্বাচন কমিশন) চাই নির্বাচনের খরচ যতটা সম্ভব কমিয়ে এই প্রক্রিয়াকে যতটা সহজ এবং নিখুঁত করা যায় তা নিশ্চিত করতে। এরই ধারাবাহিকতায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোট গণনার বিষয়টি এসেছে, বলে জানান তিনি।

প্রতিটি আসনের জন্য ব্যালট বক্স পুরোটা ভরে যাওয়ার পরিস্থিতিতে এক বা একাধিক ব্যালট বক্স দেওয়া হবে, যেখানে ব্যালটের ২টি কাগজসহ খামটি ব্যালট বক্সে রেখে দেওয়া হবে।

পোস্টাল অ্যাপে নিবন্ধন দেড় লাখ ছাড়ালো

ভোট নিবন্ধন শুরুর পরে আজ বুধবার ১৫তম দিনে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মোট ভোটার নিবন্ধন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৭৬ জন। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬২৫ জন পুরুষ ভোটার ও ১৭ হাজার ৮৫১ জন নারী ভোটার। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পোস্টাল ভোটিং আপডেট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে প্রথমবারের মতো বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন।

ইসির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দেশভিত্তিক হিসাবে সৌদি আরব থেকে ২৩ হাজার ৬১৫ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ হাজার ৭২৪ জন, সিঙ্গাপুর থেকে ১৮ হাজার ৭২৪ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯ হাজার ৪২৭ জন, যুক্তরাজ্য থেকে ৯ হাজার ৩২২ জন, কানাডা থেকে ৮ হাজার ৯২৩ জন, মালয়েশিয়া থেকে ৮ হাজার ৫১২ জন, অস্ট্রেলিয়া থেকে ৭ হাজার ৬৬৬ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৭ হাজার ১৯০ জন এবং জাপান থেকে ৬ হাজার ৮৬৮ জন নিবন্ধন করেছেন।

জেলাভিত্তিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভোটার নিবন্ধন করেছেন ঢাকা জেলার আসনগুলোর জন্য, ২৪ হাজার ২১৭ জন। সর্বোচ্চ হিসেবে এর পরের চারটি জেলা হলো- কুমিল্লার জন্য ১৫ হাজার ৪৩৭ জন, চট্টগ্রামের জন্য ১২ হাজার ২৬১ জন, সিলেটের জন্য ১০ হাজার ১৯৪ জন এবং নোয়াখালীর জন্য ১০ হাজার ৬৩ জন।

আসনভিত্তিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন হয়েছে সিলেট ১ আসনে ৩ হাজার ২৬৯ জন। এর পরের চারটি আসন হলো— নোয়াখালী-১ আসনে ২ হাজার ৮৯৪ জন, সিলেট-৬ আসনে ২ হাজার ৫৫৯ জন, ফেনী-৩ আসনে ২ হাজার ৩৬২ জন এবং ঢাকা-১৮ আসনে ২ হাজার ৩৩২ জন।

এদিকে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ দিনের জন্য ইন-কান্ট্রি (দেশের ভেতরে) পোস্টাল ভোটের নিবন্ধন চালু করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।