ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনের সামনে ব্যাডমিন্টন কোর্ট নির্মাণ ও ব্যবহারকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তি। কোর্ট ব্যবহারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা, দলীয় প্রভাব ও ডাকসুর প্রবেশপথ বাধাগ্রস্ত হওয়া নিয়ে ডাকসু নেতাদের সঙ্গে বিরোধেও জড়িয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, ডাকসুর মূল ফটকের সামনে ব্যাডমিন্টন কোর্ট বসানোয় খেলা চলাকালীন কার্যালয়ে ডাকসু নেতাদের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী ও অতিথিদেরও বেশ বেগ পোহাতে হয়। ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা খেলার পাশাপাশি আশেপাশে দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করায় ডাকসুর ফটক প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া ব্যাডমিন্টন কোর্টের কারণে জুলাইয়ে চোখ হারানো ডাকসুর আন্তর্জাতিক সম্পাদক হোঁচটও খেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা।
গতকাল রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফাতিমা তাসনিম জুমা এক পোস্টে ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীদের এই কার্যক্রম প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। তিনি ওই পোস্টে লেখেন, ‘ডাকসুতে সারাদিন অনেক শিক্ষার্থী আসে নানান কাজে। অন আওয়ারে অনেক দেশি বিদেশি ডেলিগেটস আসেন। ডাকসুতে ঢুকার রাস্তা ও ডাকসুর সামনের পার্কিং ব্লক করে যারা কোর্ট বানিয়ে সময়ে অসময়ে ব্যাডমিন্টন খেলেন আপনাদের একটু সেন্সেবল আচরণ করার অনুরোধ করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলার মতো অনেক জায়গা আছে। এখানে না খেলতে অনুরোধ করার পর আরো বেশি করে এই কাজ করার উদ্দেশ্য যদি হয় ইচ্ছেকৃত গ্যাঞ্জাম লাগানো, আগামী ৩ দিনের মধ্যে লাগাবেন প্লিজ। এরপর আমার অন্য ব্যস্ততা আছে।’
এর পরপরই ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমাকেও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশক্তির (তৎকালীন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস) পরাজয় ইঙ্গিত করে পোস্ট দিয়ে পরবর্তীতে সেটি ডিলিট দেন সর্বমিত্র। পুনরায় পোস্ট দিয়ে তিনি লেখেন, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতৃবৃন্দ ডাকসু ভবনের সামনে ব্যাটমিন্টন কোর্ট বানিয়ে প্রতি বিকেলে খেলাধুলার চর্চা করছেন, স্বাগত জানাই। খেলাধুলা ভাল অভ্যাস , শরীর সুস্থ রাখতে খেলাধুলা দরকার। ডাকসু ভবনের সামনে ব্যাটমিন্টন কোর্ট থাকবে। তবে কোনো একক দলের নয়, ব্যাটমিন্টন কোর্ট হবে জেনারেল স্টুডেন্টদের। যেখানে কোরামবাজি থাকবে না, দলীয় নেতাদের আড্ডাখানা হবে না। আমার দল-কোরামহীন ভাই-বোনটাও স্বানন্দে খেলবে।’
সর্বমিত্র চাকমার পোস্টটি শেয়ার দিয়ে জুমা আবার লেখেন, ‘এক শর্তে কোর্ট থাকবে, সেটা হলো এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা খেলবে। কোনো দলের কাছে ডাকসুর সামনের জায়গা ইজারা দেওয়া হয় নাই। পাশাপাশি সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে কেউই খেলতে পারবে না। ডাকসুতে অনেক সিরিয়াস সব কাজে আসে শিক্ষার্থীরা। আমাদের জসীম ভাই হোচট খেয়ে আহত হতে নিয়েছিল। তাই ১২টার আগে যে-ই খেলবে আমি প্রতিহত করব। এত সুশীলতা আমি করি না। এই কাজ অন্য ভবনের সামনে গিয়ে কইরেন হেডম থাকলে কিংস পার্টির ক্ষমতায়।’
একই ইস্যুতে পুনরায় পোস্ট দিয়ে ফাতেমা তাসনিম জুমা বলেন, ‘গ্যাঞ্জাম আজকের মধ্যে করায় ধন্যবাদ। আমি আবার রিমাইন্ডার দিই, অন আওয়ারে, শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ার ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমি কাউকেই খেলতে দিব না। না কোনো ডাকসু মেম্বার না অন্য কোনো দলের হনু।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন আগে। ৬ বছর ধরে ডাকসু না থাকা অবস্থায় কী হয়েছে এই নিয়ম আমাকে শেখাবেন না। অফ আওয়ারে খেললেও এই জায়গায় সবার এক্সেস থাকবে। কোনো একক দল না। আরেকটু কান্দেন। অনেক দিন পর রিল্যাভেন্ট হইসেন।’
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল সংসদের ভিপি তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, খেলাধুলার চেয়ে প্রধান সমস্যা হল ডাকসুর প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে রাখা। তিনি জানান, গত রাতে একাধিকবার তাকে ও অন্য সদস্যদের কোর্টের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে, যা ‘বিড়ম্বনা এবং বিব্রতকর।’ তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, একটা অফিসের প্রবেশপথ বন্ধ করে খেলতে আপনাদের অস্বস্তি না লাগলেও খেলা চলাকালীন কোর্টের উপর দিয়ে যাতায়াত করা আমাদের কাছে বিব্রতকর।
অন্যদিকে ফাতেমা তাসনিম জুমা ও সর্বমিত্র চাকমার বক্তব্যেরও সমালোচনা করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
এদিকে ডাকসুর একটি সূত্র জানিয়েছে, ডাকসুর সামনে প্রথমে ব্যাডমিন্ট কোর্ট করতে চেয়েছিলেন ক্রীড়া সম্পাদক আরমান হোসেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অসুবিধার বিষয়টি আমলে নিয়ে তাকে অনুমতি দেননি ডাকসুর জিএস এসএম ফরহাদ। পরে ছাত্রশক্তি কোর্ট নির্মাণ করলে আরমান হোসেন তাদের জানিয়েছিলেন যে সেখানে ডাকসু ব্যাডমিন্টন কোর্ড নির্মাণ করবে। পরে ডাকসু জিএস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ফরহাদের কথা শোনেননি।
এদিকে বিষয়টিকে বেশ হালকাভাবেই নিচ্ছেন ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক ও ছাত্রশক্তির ঢাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আল্লাহর গোলামের পক্ষ থেকে, হল সংসদ এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সকল হারু প্রার্থীদের আজকে (সোমবার) ডাকসুর সামনে ব্যাডমিন্টন খেলার আমন্ত্রণ রইলো। সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট।’