বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের ভেতর দিয়ে ভুটানের ট্রানশিপমেন্টের পণ্য পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে ভারত। আজ সোমবার দুপুরে ভারতের অনুমোদন পাওয়ার পর বিকেলেই লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে কন্টেইনারবাহী ট্রাকটি ভুটানের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারতের অনুমোদন না থাকায় গত শুক্রবার থেকে বুড়িমারী বন্দরে আটকে ছিল ভুটানের ট্রানশিপমেন্টের পরীক্ষামূলক চালানটি। এই চালান থাইল্যান্ড থেকে জাহাজে করে আনা হয়েছিল। আজ অনুমোদন পাওয়ায় বিকেল ৫টার দিকে কাস্টমসের প্রক্রিয়া শেষে ট্রাকটি ভুটানের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে গেছে।
বুড়িমারী কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্র জানায়, ভারতের কলকাতা কাস্টমস বিভাগ সোমবার বিকেলে চ্যাংড়াবান্ধা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ভুটানের আমদানি করা থাই পণ্যের ট্রানশিপমেন্ট চালান সড়কপথে নেওয়ার অনুমতিপত্র পাঠায়। অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি চ্যাংড়াবান্ধা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানায়। উভয় দেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনুমতির কাগজপত্র দেখে। এর পর বুড়িমারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান বেনকো লিমিটেডের সহায়তায় বুড়িমারী স্থলবন্দর শূন্যরেখা থেকে কার্গো গাড়িতে আনা ট্রানশিপমেন্ট চালানের কনটেইনার চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে পাঠানো হয়।
বুড়িমারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বেনকো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন বলেন, ‘ভারত ও ভুটানের সরকারি ছুটির কারণে ট্রানশিপমেন্ট পণ্যের চালান নেওয়ার অনুমতি পেতে দেরি হয়। তাছাড়া বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের চুক্তিতে সম্ভবত বুড়িমারী স্থলবন্দর রুট উল্লেখ করা নিয়ে সমস্যা ছিল। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি দেয় ভারতীয় কাস্টমস।’
জানা গেছে, কার্গো গাড়ি ও কনটেইনারটি ভারতীয় কাস্টমের হেফাজতে থাকবে। আগামীকাল মঙ্গলবার কনটেইনারটি ট্রানশিপমেন্ট করে ভারতের সড়কপথ (ট্রানজিট) ব্যবহারের মাধ্যমে ভুটানে যাবে।
২০২৩ সালের ২২ মার্চ বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে একটি প্রটোকল চুক্তি সই হয়। এক বছর পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে ভুটানে আয়োজিত দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়– বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও সড়কপথ এবং ভারতের সড়কপথ ব্যবহার করে ভুটানে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ট্রানশিপমেন্ট চালান পাঠানো হবে। তারই অংশ হিসেবে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের আবিত ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড গত ৮ সেপ্টেম্বর ভুটানের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আবিত ট্রেডিংয়ের জন্য ছয় ধরনের পণ্য কনটেইনারে করে পাঠায়। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ফলের জুস, জেলি, শুকনা ফল, লিচু ফ্লেভারের ক্যান্ডি ও শ্যাম্পু।
থাইল্যান্ডের ল্যাম চ্যাবাং বন্দর থেকে পাঠানো ওই চালান ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছায়। এরপর গত শুক্রবার কনটেইনারটি বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাঠায় চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান এনএম ট্রেডিং করপোরেশন। কনটেইনারটি স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে আনা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে ভারত হয়ে ভুটানে এসব ট্রানশিপমেন্টের পণ্য যেতে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে পাচ্ছিল না। ফলে সেখানেই পড়ে ছিল ভুটানের ট্রানশিপমেন্টের পণ্য।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার (এসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজ বিকেলে আমরা কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ভারতের অনুমতি পাওয়ার পরই পণ্যের চালানটি চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে ভারতের ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে ভুটানে যাবে। ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের ট্রানজিট কার্যক্রম অব্যাহত থাকে তাহলে বন্ধুপ্রতিম দেশ বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের যে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি, সেটির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে।’