কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ছাত্রলীগ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার সন্দেহে আটক হওয়া অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন (১৫) ১৩ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) কুমিল্লার শিশু আদালত-১ এর বিচারক ইয়াসিন আরাফাত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। ছেলেকে ফিরে পেয়ে স্বস্তি পেয়েছে পরিবার। তবে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তা কাটেনি।
ইমরান হোসেন ঢালুয়া ইউনিয়নের চিওড়া গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়ার ছেলে ইমরান ও ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ১৭ নভেম্বর গভীর রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করে নাঙ্গলকোট থানা–পুলিশ। পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ বিষয়ে ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়া বলেন, আমি নিজেও কোনো রাজনীতি করি না। আমার ছেলেও কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয়। তবু পুলিশ রাতের অন্ধকারে বাড়ি ঘিরে ইমরানকে তুলে নিয়ে যায়। তার প্রবেশপত্র নিয়ে থানায় গিয়েছিলাম, কোনো লাভ হয়নি।
১৩ দিন পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। তবে ছেলে পরীক্ষা দিতে না পারায় তিনি হতাশ।
ইসহাক মিয়ার ভাষায়, নির্দোষ ছেলেটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেল। কেউ ষড়যন্ত্র করে ইমরানকে মামলায় জড়িয়েছে। সরকারের কাছে আমার আবেদন—ছেলের জন্য বিশেষ পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার বলেন, ইমরান বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য বিদ্যালয়ে নেই। তিনি জানান, আগামী কাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবে। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় ইমরানকে আগামী বছর আবারও অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে হবে। তারপর সে পরীক্ষা দিতে পারবে।
এ বিষয়ে মামলার আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত ১৭ নভেম্বর গভীর রাতে ঢালুয়া ইউনিয়নের মনতলী ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ঝটিকা ও মশাল মিছিল করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে।
পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইমরানসহ মোট ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৫০ থেকে ৬০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। এজাহারে ইমরানকে ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
জামিনে মুক্ত হলেও বার্ষিক পরীক্ষা দিতে না পারায় এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে স্কুলছাত্র ইমরান হোসেনের শিক্ষাজীবনে।