
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর তাকে আটক করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগটি তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়নি। তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, সাইবার স্পেস ব্যবহার করে শ্লীলতাহানি বা ধর্মীয় উসকানির কিছু উপাদান তদন্তে পাওয়া গেছে। তাকে শ্রীশান্তকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে প্রয়োজনে রিমান্ড চাওয়া হতে পারে।’
এজাহারে বলা হয়েছে, বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলে থেকে রেডিটে ‘WeeklyService923’ নামে অ্যাকাউন্টে নিয়মিত লেখালেখি করতেন শ্রীশান্ত। এতে নারী ও ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর কথা গর্বের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রকাশ করতেন তিনি। এক মুসলিম ছাত্রীকে ‘ধর্ষণ’ করার কথাও প্রচারের অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন পোস্ট দেখে তাকে খুঁজতে শুরু করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তবে রেডিটে তিনি নিজের নাম প্রকাশ না করায় বেশ বেগ পেতে হয় তাদের।
এরইমধ্যে ছদ্মনাম ও কিছু অনলাইন কার্যক্রম থেকে সূত্র খুঁজে পান বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করে শেষ পর্যন্ত তারা নিশ্চিত হন, আইডির পেছনের ব্যক্তি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সহপাঠীকে ‘যৌন হয়রানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাইবার বুলিংয়ের’ অভিযোগ তুলে শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মধ্যরাতে বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মধ্যরাতে উত্তেজনা ছড়ানোর পর সকালে বুয়েটের এ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ২৫ ও ২৬ ধারায় চকবাজার থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাতে শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। মামলার এজাহার, তার পোস্ট এবং শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ যৌন হয়রানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার কথা উল্লেখ করেছেন।
বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে সাইবার সুরক্ষা আইনে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আশরাফুজ্জামান। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চকবাজার থানায় মামলা করে। এতে তার বিরুদ্ধে সাইবার স্পেসে নারীদের নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।’
এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার আসামি শ্রীশান্ত রায় উত্তরা আবাসিক এলাকা বসবাস করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার শাহপরান থানা এলাকায়। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে আহসান উল্লাহ হল থেকে শ্রীশান্ত রায়কে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আটক করে। তার নিকট হতে একটি ল্যাপটপ, আইপ্যাডসহ বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যায়। তার বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বাদীসহ শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে গভীর উদ্বেগ ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় মর্মে বাদী এজাহার দায়ের করেছেন। কর্তৃপক্ষের নিকট থাকা আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। তাকে গ্রেপ্তারের সময় আহসানউল্লাহ হলের ভেতরে এবং বাইরে অনেক ছাত্র-ছাত্রী তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। তাকে কেন্দ্র করে বুয়েট এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়।
এজেহারে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন যাবৎ মুসলিম নারী ও ইসলাম ধর্মীয় বিষয়ে অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ আপত্তিকর পোস্ট করছিল আসামি। দীর্ঘদিন চেষ্টা করে ছদ্মনামে ব্যবহৃত আইডির প্রকৃত পরিচয়ধারী ব্যক্তি শ্রীশান্ত রায়কে শনাক্ত করা হয়। তার মুসলিম নারী সংক্রান্ত অশ্লীল মন্তব্য এবং ধর্মীয় ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য শিক্ষার্থীসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে।