Image description

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, উচ্চকক্ষে পিআর ও সাংবিধানিক কাউন্সিলসহ ১৬৬টি প্রস্তাবের ওপর নেয়া হয় মতামত। শেষ পর্যন্ত ৭৫টি প্রস্তাবে সর্বসম্মত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। নোট অব ডিসেন্টসহ সম্মতি আছে আরও ৯ বিষয়ে।

আট মাসের দীর্ঘ এই আলোচনার পরও মতপার্থক্য নিয়ে শেষ হলো কমিশনের বৈঠক। অবশ্য ৭৫টি প্রস্তাবে সর্বসম্মত হওয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, রাজনৈতিক বিরোধের সংস্কৃতির মধ্যে এটি উল্লেখ করার মতো শুভ সূচনা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হলেও এজন্য পরবর্তী সংসদের ওপর নির্ভর করতে হবে। তাই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন বেশি জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, যেই গণভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা যাচ্ছে, সেই গণভোটের মাধ্যমে কিন্তু আরেকজন পরিবর্তন করতে পারবে। কোনও কিছুই চূড়ান্ত না। যেই দল ক্ষমতায় আসবে, তারা যদি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে, তাহলে তার যে জনপ্রিয়তা সেটি ব্যবহার করে জুলাই সনদকেও পরিবর্তন করতে পারে তার মতো করে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বললেন, চাইতেছে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলুক; এ রকম পরিস্থিতিতে যে ভোটের দিকে যাওয়া হচ্ছে, সেটির সিদ্ধান্ত আবার নিতে হবে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে। তাহলে যেটুকু ‘হ্যাঁ’/না করছেন, সেটি তো নির্বাচিত সংসদেই হতে পারে।

তারা বলছেন, জুলাই আন্দোলনের পর কোনও বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি। বিদ্যমান সংবিধানের আলোকেই চলছে সরকারি কার্যক্রম। ফলে গণভোট করলেও ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নির্ভর করতে হবে পরবর্তী সংসদের ওপর। গণভোট সেই সরকারকে সংবিধানে বড় পরিবর্তন আনার বিশেষ ম্যান্ডেট দিতে পারে কেবল।

ড. কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সবকিছু মিলিয়ে কিন্তু একটা বিরাট সফলতা ঐকমত্য কমিশনের। আমরা কিন্তু মনে করতাম ১০টা ইস্যুতেই একমত হলেই চলে। তো এখন বড়-ছোট ইস্যু মিলে তারা অনেক বেশি ইস্যুতে এক হয়েছে।

জোতির্ময় বড়ুয়ার মতে, আমাদের মতো বিভাজিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সমাজে হঠাৎ করে তারা ঐকমত্য পোষণ করবে সেটা তো মুশকিল। কারণ, আমাদের নিজেদের মধ্যেই অনেকগুলো অমীমাংসিত রাজনৈতিক বড় বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে।

তবে জুলাই আন্দোলন বিবেচনায় রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে সদিচ্ছা দেখাতে পারেনি দলগুলো। দলীয় স্বার্থই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। সে অর্থে ঐকমত্য কমিশন চূড়ান্ত সফলতা পায়নি।

জোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, কমিশন যেভাবে কাজ করার কথা ছিল কিংবা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে অন্যান্য যে সমস্ত প্রত্যাশা আমাদের ছিল, তার কোনোটাই তো আসলে এখন পর্যন্ত আমরা অর্জন করতে দেখিনি বা পারিনি। সেক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশনের এই কাজগুলো আমি আসলে খুব সফল হয়েছে বলে মনে করছি না।

অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বললেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় সংকট হলো, তারা বলে জনগণের ওপর আস্থা আছে। কিন্তু তাদের অনেকেরই জনগণের ওপর আস্থা নাই। মনে করে, জনগণ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তারই ক্ষমতায় থাকার কথা ছিল, তারই ক্ষমতায় আসার কথা ছিল। তারই শাসন করার কথা ছিল। অন্য কেউ শাসন সরছে, জনগণের সিদ্ধান্ত ভুল।

এ মাসের ১৫ তারিখ ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই অন্তর্বর্তী সরকারকে সুপারিশ দেবে কমিশন। জুলাই সনদ সাক্ষর হতে পারে ১৬ কিংবা ১৭ অক্টোবরের মধ্যে।