Image description

পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করে রাজধানীসহ নিজ এলাকায় রাজসিক বাড়ি ঢাকার বসুন্ধরা, মিরপুরে একাধিক ফ্ল্যাট এবং অর্ধশত বিঘা জমি কিনে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জেএম খালেক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মঠবাড়িয়ার শাখারীকাঠি গ্রামের এস্কান্দার জমাদ্দারের ছেলে জেএম খালেক প্রান্তিক পর্যায়ের পরিবারে জন্ম নিয়ে স্কুল জীবনে এলাকার পুকুর, খাল ও বিলের শাপলা তুলে জীবন-জীবিকার ও লেখাপড়ার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। কোনোমতে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে ভাগ্য ফেরাতে ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।

তিনি বরিশাল, ঝালকাঠী, কিছু দিন চাকরি করার পর ডিএমপিতে বদলি হলে রাজারবাগ কর্মস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার এক আত্মীয় সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়। সে সুবাধে তার শুরু হয় পুলিশের নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ করে স্বাস্থ্য সহকারী পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মীদের থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময় দেদার নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র ১৫/১৬ বছরের মধ্যেই তিনি যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যায়। চাকরির ৮/৯ বছরের মধ্যে তিনি ঢাকা বরিশালসহ মঠবাড়িয়ায় একাধিক রাজকীয় বাড়ির মালিক বনে যান।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনে চাকরিরত অবস্থায় মিরপুর নতুন বাজার বেকারি গলিতে দুটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট রয়েছে। একটি তৃতীয় তলায়, অপরটি পঞ্চম তলায় এবং বসুন্ধরায় দুটি আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে। বর্তমানে তার স্ত্রী নিয়ে সেখানে তিনি বসবাস করছেন। এছাড়াও মঠবাড়িয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের মোমেনিয়া মাদ্রাসার খালের পূর্ব দিকে ২০২০ সালে তিন কাঠা জমিতে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চোখ ধাঁধানো ৪তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। ওই ভবনের পেছনে দেড় কাঠা জমিতে ৩য় তলা ছাদ ঢালাইয়ের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য প্লট কিনেছেন। জেএম খালেকের জন্মস্থান শাখারীকাঠি, শ্বশুরবাড়ি বেতমোর নতুন হাট, বোনের বাড়ি নিজামিয়া এলাকায় অর্ধশতাধিক ধানী (নাল) জমি স্বজনদের নামে ক্রয় করেন। বর্তমানেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ২০টি মন্ত্রণালয় তদবির বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

সুচতুর এ দুর্নীতি পরায়ন জেএম খালেক অন্য ড্রাইভারের নামে কোটি টাকার গাড়ি কিনে ঢাকার শহর দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। যার গাড়ি নং-ঢাকা-মেট্টো (ঘ-১২৩০৩৭)। এর আগে প্রভাব খাটিয়ে তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচলের জন্য যে গাড়িটি ব্যবহার করতেন তাতে সংসদ-সদস্যের স্টিকার ব্যবহার করা হতো। প্রশাসন যাতে তার অবস্থায় শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য প্রতারক জেএম খালেক বিদেশি রাউটার ব্যবহার ও বিভিন্ন লোকের নামে প্রায় শতাধিক মোবাইল সিম ব্যবহার করছেন। তিনি মঠবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের বড় ডোনার ছিলেন।

এর আগে গত ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করার জনশ্রুতি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ। ৫ আগস্ট থেকে মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মামলা হামলার ভয়ে ভারতে আত্মগোপনে রয়েছেন। সেখানে খালেক ভারতে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে দেখা ও রীতিমতো মোটা অংকের আর্থিক সহায়তা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়। কিছুদিন পূর্বে খালেককে গ্রেফতারের জন্য যৌথ বাহিনী তার বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানের আগাম খবর পেয়ে তিনি বাসা থেকে পালিয়ে যান। এলাকার জনৈক ব্যক্তি জেএম খালেকের বিরুদ্ধে তৎকালিন সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদের বরাবরে তার দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করলে সুচতুর খালেক মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন। একই অভিযোগ দুদকে দেওয়া হলে দুদক বিষয়টি তদন্ত না করে রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যান। পরে দুর্নীতির অভিযোগ ও মামলা হতে রেহাই পেতে করোনার সময় চাকরি ছেড়ে দেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বাচ্চু মিয়া আকন জানান, কনস্টেবল পদে জেএম খালেকের সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধান করা উচিত। উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম আওয়ামী লীগের অর্থ দাতা খালেককে অতি দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। উপজেলা জামায়াতের যুব ও ক্রীড়া সভাপতি তারেক মনোয়ার বলেন, সে যতবড় ধূর্তবাজ হোক না কেন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। অবৈধ সম্পদ রক্ষায় কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের ছত্র-ছায়ায় নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন।