Image description

ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক প্রথম সচিব (শ্রম) জিলাল হোসেনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) থাকাকালে জিলাল হোসেন আমেরিকায় একটি পিএইচডি কোর্স করার জন্য চার বছরের শিক্ষা ছুটি চান।

তবে তার আবেদনে ফান্ডিং-সংক্রান্ত তথ্যের মধ্যে অসংগতি পাওয়া যায়। এরপর ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ৯ মাসের বেশি সময় অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। মামলায় অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হলে সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন। ফলে চাকরি থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রস্তাবিত গুরুদণ্ড বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের মতামত নেওয়া হয়। কমিশন বরখাস্তের পক্ষে মত দেওয়ায় বিধিমালা অনুযায়ী তাকে ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে কার্যকরভাবে বরখাস্ত করা হলো।

জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা জিলাল হোসেন ২০১৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান তিনি। এরপর ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) পদে যোগ দেন। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে গিয়ে প্রায় ২০ জন প্রবাসী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানব পাচারের মামলা দিয়ে তাদের দেশছাড়া করে সম্পদ দখল করেন। শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে একের পর এক মামলা করা হয়। এমনকি নিজেই ফেসবুকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আদম ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায়ীদের সম্পদ আত্মসাৎ ও আদম ব্যবসার মাধ্যমে তিনি শতকোটি টাকা উপার্জন করে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।

২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট প্রবাসী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ব্রুনাই হাইকমিশনের ভেতরে আটকে নির্যাতন করা হয়। ছয় দিন পর একইভাবে নির্যাতনের শিকার হন আরেক প্রবাসী কামরুল ইসলাম। এ ঘটনার ভিডিওচিত্র প্রকাশ হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনায় ব্রুনাইয়ে কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও কৌশলে রক্ষা পান জিলাল হোসেন।

আরও অভিযোগ রয়েছে, মালয়েশিয়ার নাগরিক সারা বিনতে আকিল ২০১৯ সালে বাংলাদেশি ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রথমে দুই দফায় ভিসা দেওয়া হলেও ঘুষ না দেওয়ায় তার পাসপোর্ট থেকে ভিসার সিল কেটে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ওই মালয়েশীয় নাগরিক। প্রবাসী বাংলাদেশি মেহেদী হাসান, আবদুল্লাহ আল মামুন অপু ও আরও কয়েকজন ভিডিওচিত্র ধারণ করলে এতে ক্ষুব্ধ হন জিলাল হোসেন। এর কিছুদিন পরই মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে মানব পাচার, শ্রমিক নির্যাতন, হাইকমিশনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য, মানহানিকর ভিডিও তৈরি এবং রাষ্ট্রদ্রোহসহ নানা অভিযোগ এনে তার পাসপোর্ট বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান তিনি।

২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হাইকমিশনের চিঠিতে মেহেদীর বিরুদ্ধে ৫০টির বেশি শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। ২৫ দিন পর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়, তার নামে শতাধিক অভিযোগ রয়েছে। অথচ ঘুষ না দেওয়া পর্যন্ত মেহেদীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। অভিযোগ ওঠে, ঘুষের প্রতিবাদ করার পরই তাকে টার্গেট করে এসব ভয়ংকর অভিযোগ সাজানো হয়।