
ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে গত ২৩ মার্চ থেকে। যখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী আপনজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে, তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের নির্জন করিডোরে বসে একাগ্র চিত্তে পড়াশোনা করছেন এক শিক্ষার্থী। ছুটির সময় ক্যাম্পাস পরিদর্শনে গিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিবেদকের নজরে আসেন তিনি।
মো. সাইফুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার স্বপ্ন বিসিএস এডমিন ক্যাডার হওয়া। চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাইফুল বর্তমানে পুরান ঢাকার নারিন্দায় একটি মেসে থাকেন। মাধ্যমিক শেষ করেছেন নিজ জেলা থেকে এবং উচ্চমাধ্যমিক কুমিল্লার হজরত ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। অনিশ্চিত ক্যারিয়ারের বাস্তবতায় তিনি বিসিএসকেই লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
২৩ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি কার্যকর হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে বাড়ির পথে রওনা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই ক্যাম্পাস প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ক্লাসরুম, করিডোর, লাইব্রেরি, চত্বর—সব জায়গায় নেমে আসে নীরবতা। কিন্তু সাইফুল রয়ে গেছেন ক্যাম্পাসেই।
কলা ভবনের করিডোরে মেঝেতে পেপার বিছিয়ে বসে পড়ছিলেন সাইফুল। আশেপাশের মশার কামড় থেকে বাঁচতে কয়েকটি মশার কয়েল জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। তার সামনে প্রয়োজনীয় বই-খাতা ও কলম, আর পাশে ছিল একটি ছোট বাটন মোবাইল ফোন। চারপাশ নীরব, জনশূন্য ক্যাম্পাসের মাঝে একমাত্র সঙ্গী বই ও অধ্যবসায়।
গত বছরের ২৭ এপ্রিল বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এক বছর ধরে লিখিত পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করেছেন তিনি। অবশেষে, আগামী ৮ই মে অনুষ্ঠিত হবে সেই প্রতীক্ষিত পরীক্ষা। অল্প সময়ের প্রস্তুতিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে চান তিনি, তাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের সুযোগ ত্যাগ করেছেন।
পরিবারের ছয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সাইফুল। তার লক্ষ্য ক্যারিয়ারে সফল হয়ে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া। ঈদে বাড়ি যেতে না পারার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন—‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটানোর আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এবার তা সম্ভব হচ্ছে না, যা কষ্টদায়ক। তবে যদি স্বপ্নপূরণ করতে পারি, তাহলে এই কষ্ট আনন্দে রূপ নেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ৮ই মে আমার লিখিত পরীক্ষা। প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় নিজেকে প্রস্তুতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। বাড়ি গেলে একদিন যাওয়া, একদিন আসা এবং সেখানে থাকা কয়দিন—এই সময়ের ঘাটতি তৈরি হবে, যা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনার যে গতি হ্রাস পাবে, তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই এখানেই থেকে পুরো সময়টুকু পড়াশোনায় কাজে লাগাচ্ছি।’
সাইফুলের এই আত্মত্যাগ প্রমাণ করে, সফলতা অর্জনের পেছনে কঠোর পরিশ্রম ও আত্মনিয়ন্ত্রণই মূল চাবিকাঠি। তার মতো অসংখ্য শিক্ষার্থী আছে, যারা জীবনের বড় লক্ষ্যের জন্য সাময়িক আনন্দ ত্যাগ করে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।