
রমজানের মহিমান্বিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুটে ওঠে অসাম্প্রদায়িকতার অনন্য এক মোহনা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ক্যাম্পাসও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম শিক্ষার্থীদের রোজা রাখা, ইফতারির প্রস্তুতি ও তারাবিহ নামাজের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই মাস পরিণত হয় আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও মানবিক বন্ধনের এক উজ্জ্বল মাধ্যমে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত হয় আন্তঃধর্মীয় ইফতার মহফিল, যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাসের সীমানা পেরিয়ে সকলে ভাগ করে নেয় সুখাদ্য ও আত্মীয়তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, একজন মুসলিম হিসাবে বলতে চাই রমজান মানেই শুধু উপবাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম ও সহমর্মিতার মাস। রমজান হলো এক ভিন্ন আবহ—সকালের সেহরি, ক্লান্ত দুপুর, ইফতারের আনন্দ, আর তারাবির প্রশান্তি। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধর্মের বন্ধুরা যখন সম্মান ও সংহতি দেখায়, তখন উৎসবের অনুভূতি আরও গভীর হয়। অনেক সময় বন্ধুদের কেউ কেউ ইফতারে যোগ দেয়, কিংবা ক্লাসে বাড়তি সহযোগিতা করে—এসবই সম্প্রীতির প্রতিচিত্র। বিশেষ করে, যখন ভিন্ন ধর্মের বন্ধুরা “আজ ইফতারে কী আছে?” বলে আগ্রহ দেখায়, তখন সত্যিই ভালো লাগে। রমজান শুধু ধর্মীয় সাধনার মাসই নয়, এটি সহমর্মিতা ও সম্প্রীতিরও এক অনন্য উদাহরণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অয়ন বিশ্বাস বলেন, রমজান মাস ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। তারা এই এক মাস অনেক সংযম এর মাধ্যমে এই দিনগুলো পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে এই মাসের সাথে এতটা জড়িত ছিলাম না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছি।আর এই একমাস তাদের কঠোর সাধনার পর ঈদের যে আনন্দ দেখে খুবই ভালো লাগত। বিশেষ করে হলে ওঠার পর, ইফতারির সময়ের সেই স্মৃতি গুলো খুব বেশি করে মনে থাকবে। হয়ত আমাদের ব্যাচের এটাই শেষ রোজা ভার্সিটিতে। অনেক গুলো মুসলিম বন্ধুদের সাথে বসে যখন ইফতার করি, তখন অনেকটা উৎসব এর মতন মনে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই সময় গুলো স্মৃতির আর্ট বুকে সুন্দর করে আঁকা থাকবে। বিশেষ করে আমাদের মুসলিম বন্ধুদের সাথে সাথে আমিও জিলাপি নাকি বুন্দিয়া তর্কে জড়িয়ে যাওয়ার যে ব্যাপারটা এটা কখনোই ভোলার না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সপ্তক বড়ুয়া বলেন, রমজান বিশ্বের ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি,এই এক মাস জুড়ে মুসলিমরা প্রতিদিন রোজা রেখে ইফতার, সেহরির মাধ্যমে রমজানকে মূল্যায়ন করে থাকে। আমাদের বৌদ্ধ ধর্মেও অষ্টশীল নামে একটি বিসর্গ আছে। যেটি কিছুটা রোজার মতো হলেও, রোজা রাখা আমাদেরটার তুলনায় অনেক কঠিন। রমজান শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করে। রমজান মাসটি আমার জানামতে,মুসলিম বন্ধুদের জন্য ইবাদতের মাস, রমজান মাস সংযমের মাস। আমি সবসময় খেয়াল করি যে,কোনো মুসলিম কম বেশি ধর্মপ্রাণ যাই হোক না কেনো, এই একটি মাস তারা নিজেদের সবকিছু দোষ ত্রুটিকে পেছনে ফেলে ইবাদতে শামিল হয়। এই বিষয়টি একজন অমুসলিম হিসেবে আমি খুবই সম্মান করি। আর রমজান মাসে আমার অনেক সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়।কারণ বন্ধুদের সাথে প্রায় সময় ইফতার করি।আর ইফতারের নিয়মিত খাবার যেমন-ছোলা, চপ, মুড়ি, জিলাপি এগুলো আমার অনেক প্রিয় খাবার। তাই রমজানে এই খাবারগুলোর চাহিদা বেশি থাকে বিধায় প্রতিদিন এই খাবারগুলো খেতে পারি। বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে দাওয়াত পাই। সবাই একসাথে রোজা ভেঙে ইফতার করার ব্যাপারটা খুব সুন্দর লাগে।রমজানে অভিজ্ঞতা গুলো আনন্দদায়ক।আর ঈদে বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি, ঘুরাঘুরি তো আছেই। খারাপ অভিজ্ঞতা বলতে,অমুসলিম হিসেবে যেহেতু আমাদের সকাল দুপুর প্রতিদিনের খাবার খাওয়া লাগে তো খাবার পেতে কষ্ট হয়। আর হলে ডাইনিং যেহেতু বন্ধ থাকে সকাল দুপুর। তাই ক্যান্টিনে একই ধরনের তরকারি দিয়ে বার বার খাওয়া লাগে। সর্বোপরি, রমজানের অভিজ্ঞতাগুলো সুন্দরই বলা যায়।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এক শিক্ষার্থী বলেন, ইফতার মাহফিলে গিয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুনি। আমাদের গির্জার প্রার্থনার সঙ্গে এর মিল খুঁজি। ধর্ম যতই আলাদা হোক, শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা তো একই!