Image description
 

ভারত শেখ হাসিনাকে পুরোটা সময় ধরে সহযোগিতা করে আসছে। তারা এখনও আশা করছে, তিনি হয়তো বাংলাদেশে বিজয়ীর বেশে ফেরত আসবেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদি হাসানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। 

মেহেদি হাসান একজন সম্প্রচার সাংবাদিক, লেখক ও মিডিয়া কোম্পানি জেটিওর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আলজাজিরা টেলিভিশনের টকশো ‘হেড টু হেড’-এর উপস্থাপক। ড. ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার ফাঁকে মেহেদি হাসানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সমকাল গতকাল মঙ্গলবার ওই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ প্রকাশ করেছিল। জেটিওতে ৩৪ মিনিটের পুরো সাক্ষাৎকারটি সোমবার প্রচার করা হয়। সমকালের পাঠকদের জন্য ওই সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

 
 

মেহেদি হাসান: শেখ হাসিনার দুই দশকের স্বৈরশাসনের অবসানের রাতে আপনি কেমন অনুভব করেছিলেন? ভয়, আশা, হতভম্ব হওয়া– কোনটি? 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: আমি উত্তেজনা অনুভব করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত এটি হয়েছে। এটি একটি অভূতপূর্ব খবর ছিল। 

 

মেহেদি হাসান: আপনি কি চিন্তা করেছিলেন যে এটি ঘটতে যাচ্ছে?

ড. ইউনূস: না, এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। মাঠে আন্দোলন বাড়ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এত খারাপ হবে যে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবেন, তা কল্পনাও করিনি। তখনও আমি বিস্তারিত জানতাম না, তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি চলে গেছেন, যা উত্তেজনাকর খবর ছিল।

মেহেদি হাসান: গণঅভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়া কেমন? এখনও কি বাংলাদেশে আশাবাদ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে? নাকি ধীরগতির পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশিরা হতাশ?

ড. ইউনূস: দুই ধরনের অনুভূতিই রয়েছে। হতাশাও রয়েছে, পাশাপাশি উত্তেজনাও। কারণ, কিছু একটা হচ্ছে। হতাশা আছে, কারণ মানুষের প্রত্যাশার জায়গাটি অনেক বড়; তারা সবকিছু এখনই চায়, কালকে নয়। ফলে প্রত্যাশা যখন আজই পূরণ হচ্ছে না, তাহলে সরকার ভালো না। তবে আমি এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি, নেতিবাচক নয়।

মেহেদি হাসান: শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বের জন্য আপনাকে পছন্দ করেছে। বিষয়টি কি আপনাকে অবাক করেছে? আর কেন তারা অরাজনৈতিক, ৮০ বছরের বেশি বয়সের একজন অর্থনীতিবিদকেই পছন্দ করল?

ড. ইউনূস: বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে। আমি তাদের চিনতাম না। তাদের সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি, তাদের সঙ্গে কখনও কথা হয়নি। প্রথম বার্তাটি এসেছিল আমার প্রতিষ্ঠানের এক সহকর্মীর কাছে, ‘শিক্ষার্থীরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তারা চাইছে, আপনি দায়িত্ব নেন।’ আমি সহকর্মীকে বলেছি, ‘তাদের এড়িয়ে চলো। এ আলোচনার মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ো না। তাদের বোঝাও যে এটি হওয়ার নয়।’ আমার সহকর্মীকে রাজি করাতে না পেরে পরদিন শিক্ষার্থীরা সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তারা ফোন করে, বিস্তারিত জানায়। আমি তাদের বলি, ‘অন্য কাউকে খুঁজে নিতে, আমি এর মধ্যে সম্পৃক্ত হতে চাই না।’ তিন দিন ধরে একই আলোচনা চলে। আমি এর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি।

মেহেদি হাসান: কোন বিষয়টি আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সহযোগিতা করেছে?

ড. ইউনূস: ছাত্ররা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করল। শিক্ষার্থীরা জীবন উৎসর্গ করেছে, শিশুরা গুলি খেয়েছে, অনেক কিছু হয়েছে; শিক্ষার্থীরা আপনাকে চাইছে। যদি এড়িয়ে যান, তাহলে দেশের কী হবে? তারা আমাকে নিয়ে খুবই উৎসাহী ছিল। তখন আমি বলেছি, ‘ঠিক আছে, আপনারা যেহেতু এত আত্মত্যাগ করেছেন, আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব।’

মেহেদি হাসান: আপনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা আত্মত্যাগ করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ছাত্র আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা সরকার প্রায় ১ হাজার ৪০০ হত্যা করেছে। বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করেছে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুরক্ষায় শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে আছেন। আপনি একাধিকবার অনুরোধ করেছেন শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে। জবাবদিহির জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে নরেন্দ্র মোদি আপনার অনুরোধ উপেক্ষা করছে– এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? আপনার কি মনে হয়, ভারত কখনও শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে?

ড. ইউনূস: ভারত যদি নিজে একা সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে তারা হয়তো শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে যাবে। আর যদি কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়, যা ভারত উপেক্ষা করতে পারবে না, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে।

মেহেদি হাসান: শেখ হাসিনাকে সুরক্ষা দেওয়ার পেছনে ভারতের স্বার্থ কী?

ড. ইউনূস: ভারত শেখ হাসিনাকে পুরোটা সময় ধরে সহযোগিতা করে আসছে। তারা এখনও আশা করছে, তিনি হয়তো বাংলাদেশে পূর্ণ গৌরবের সঙ্গে বিজয়ীর বেশে ফেরত আসবেন।

মেহেদি হাসান: নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করছেন। এটি কি আপনাকে উদ্বিগ্ন করে?

ড. ইউনূস: অনেক উদ্বিগ্ন করে।

মেহেদি হাসান: ভারত কি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে পুনর্বাসন করবে? বিষয়টি কি আপনাকে উদ্বিগ্ন করে?

ড. ইউনূস: আমি আপনার বাক্যে বিষয়টি বলব না। তবে কোনো বহিঃশক্তি তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত আসতে সহযোগিতা করবে– এমন সম্ভাবনা আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সব সময় উদ্বিগ্ন।

মেহেদি হাসান: আপনি কি বিষয়টি নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন?

ড. ইউনূস: বলেছি।

মেহেদি হাসান: আপনি বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন। তখন নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন?

ড. ইউনূস: এখানে দুটি বিষয়। নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছি, আপনারা যদি তাঁকে রাখতে চান, রাখেন। আমি আপনাকে উপদেশ দিতে পারি না, তাঁর সঙ্গে কী করবেন। তবে তিনি যাতে আমাদের নিয়ে কথা না বলেন, সেটি নিশ্চিত করেন।

মেহেদি হাসান: নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন?

ড. ইউনূস: তিনি বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।

মেহেদি হাসান: শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর আপনার সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে। আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে কার্যকরভাবে বাধা দিচ্ছে। আগেও বাংলাদেশ রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার মতো ভুল করেছিল। আপনি একই বিষয় অনুসরণ করছেন। এ সমালোচনার বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

ড. ইউনূস: এটি ভুল সমালোচনা। কারণ, আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি।

মেহেদি হাসান: আপনি তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছেন।

ড. ইউনূস: না, আমরা তাদের নিবন্ধন বাতিল করিনি। শুধু তাদের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করেছি।

মেহেদি হাসান: এর অর্থ কী?

ড. ইউনূস: এর অর্থ হচ্ছে, তারা কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তাদের দল এখনও রয়েছে।

মেহেদি হাসান: আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে?

ড. ইউনূস: এখন নয়, কারণ তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে এখনও বৈধ। কিন্তু কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। যে কোনো সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখার অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে।

মেহেদি হাসান: আপনি বলছেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে?

ড. ইউনূস: নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মেহেদি হাসান: আপনি রাজনৈতিক দলটিকে নিষিদ্ধ করেননি। কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না?

ড. ইউনূস: হ্যাঁ, এটাই।

মেহেদি হাসান: এটি কীভাবে গণতান্ত্রিক হয়?

ড. ইউনূস: নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, রাজনৈতিক দলটির এ চরিত্র বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মেহেদি হাসান: আপনি হয়তো অস্বীকার করবেন না, বাংলাদেশে তাদের লাখ লাখ সমর্থক রয়েছে।

ড. ইউনূস: আমি লাখ লাখ বলব না। তাদের সমর্থক রয়েছে, কিন্তু এখন কতজন রয়েছে, তা জানা নেই।

মেহেদি হাসান: তাদের একটি বড় সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে বাংলাদেশে, এটি তো আপনি অস্বীকার করবেন না।

ড. ইউনূস: অবশ্যই না, তারা দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক দল।

মেহেদি হাসান: এখন তাদের কোনো অবস্থান নেই। আপনি তাদের দলকে রাজনীতিতে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছেন।

ড. ইউনূস: তাদের সমর্থকরা ভোট দিতে পারবেন, তারা বৈধ ভোটার। নির্বাচনে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেখান থেকে তারা প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন। আওয়ামী লীগের মার্কা সেখানে থাকবে না।

মেহেদি হাসান: মানুষ বলছে, নতুন সরকার আগের সরকারের মতো আচরণ করছে। এ পরিস্থিতি কি বাংলাদেশের জন্য ভালো?

ড. ইউনূস: এটি ছাড়া আমরা নির্বাচন করতে পারব না। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করছে না। তারা যে মানুষ হত্যা করেছে, এখনও সে অনুশোচনা প্রকাশ করেনি। তারা ক্ষমতায় থাকাকালে যা করেছে, তার কোনো দায়িত্ব এখনও নেয়নি। সব সময়ে তাদের কার্যক্রমের জন্য অন্যকে দায়ী করে আসছে।

মেহেদি হাসান: গত নভেম্বরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০ হাজার মানুষ আপনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। তাদের সম্প্রদায়ের ওপর হাজারো হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও সে সময়ে বাংলাদেশে এসব হামলাকে বর্বর বলে উল্লেখ করেছেন। এসব বড় বা ছোট হামলাকে নিয়ন্ত্রণ করতে কী লাগবে? এসব কি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে?

ড. ইউনূস: প্রথমত, এগুলো মিথ্যা সংবাদ।

মেহেদি হাসান: আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্ধৃতি করে বলেছি, আর আপনি বলছেন যে এগুলো মিথ্যা সংবাদ?

ড. ইউনূস: হ্যাঁ, ডোনাল্ড ট্রাম্প কি কখনও এ রকম কথা বলেছেন? বাংলাদেশে এখন কী হচ্ছে, সে বিষয়ে কি তিনি জানেন?

মেহেদি হাসান: আপনি বলছেন, অভিযোগগুলো শুধু অতিরঞ্জিত নয়, মিথ্যা। বাংলাদেশে কি কোনো সহিংসতা হয়নি? নিউইয়র্ক টাইমস একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেগুলো কি আপনি অস্বীকার করবেন?

ড. ইউনূস: ভারতের এখন একটি বিশেষত্ব হচ্ছে মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো। ভুয়া খবরের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। 

মেহেদি হাসান: আমি সেটি বুঝি, সেগুলো অতিরঞ্জিত। কিন্তু আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বাংলাদেশে কোনো হিন্দুর ওপর সহিংসতা হয়নি?

ড. ইউনূস: বাংলাদেশে সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক বিরাজমান। পারিবারিক সমস্যা, জমি-সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। এখন আপনি এটিকে তো হিন্দু-মুসলিম সংঘাত বলতে পারেন না।

মেহেদি হাসান: আপনি বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর এ সংঘাতের সংখ্যা বাড়েনি? স্বাধীন সাংবাদিকরা বলছেন, বেড়েছে। 

ড. ইউনূস: না, এ সংখ্যা বাড়েনি। সরকার এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। কারণ, ভারত এটিকে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে।

মেহেদি হাসান: প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রতি আপনার বার্তা কী?

ড. ইউনূস: যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। কারণ, তাদের বড় উৎসব দুর্গাপূজা আসছে (চলছে)। যখনই তাদের সঙ্গে দেখা হয় তাদের বলেছি, ‘কোথাও গিয়ে এটি বলবেন না যে আমি হিন্দু; আমাকে সুরক্ষা দিন। বলবেন, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আমি রাষ্ট্রের সকল সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখি। নিজেদের একা করে ফেলবেন না।’

মেহেদি হাসান: শুধু হিন্দু বা মুসলিম নয়, বিশাল সংখ্যক বাংলাদেশি বর্তমানে কিছুটা অনিরাপদ বোধ করছে। সহিংসতা, অপরাধ, শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার পর ডজনখানেক পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ওপর প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ হয়েছে। অপহরণ দ্বিগুণ হয়েছে, গত ছয় বছরের মধ্যে ডাকাতির সংখ্যা সর্বোচ্চ। অনেক জায়গায় পুলিশকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর কিছু অস্থিরতা থাকে। তবে আপনি কি মনে করেন, আপনার সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও ভালো কিছু করতে পারত?

ড. ইউনূস: এটি একটি অভ্যুত্থান ছিল। সবকিছু ভেঙে পড়েছিল। সরকার ছিল না। গতকাল যারা আপনার ওপর গুলি চালাচ্ছিল, তারা শান্তিরক্ষী হিসেবে এখন আপনার সামনে কাজ করছে। আপনি জানেন না, সে কোন পক্ষের। এটি ছিল পরিবর্তনের সময়। যখন বিষয়গুলো স্থির হতে শুরু করেছে...।

মেহেদি হাসান: পরিস্থিতি কি স্থির হতে শুরু করেছে? অপরাধ কি নিয়ন্ত্রণে এসেছে?

ড. ইউনূস: অবশ্যই।

মেহেদি হাসান: কারণ সেনাপ্রধান সম্প্রতি বলেছেন, আপনারা যদি আপনাদের বিভেদগুলো দূর করে একত্রে কাজ না করতে পারেন, একে অপরকে দোষ দিয়ে সংঘাতে জড়ান, তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ঝুঁকির মুখে পড়বে। এ বিষয়ে কি আপনার উদ্বেগ রয়েছে?

ড. ইউনূস: এগুলো সুন্দর কথা। যে কোনো মানুষ এটি বলতে পারে। এটি সাধারণ কথা। যে কেউ এটি বলতে পারে।

মেহেদি হাসান: আপনি কি সেনাপ্রধানের কথার সঙ্গে একমত?

ড. ইউনূস: এ কথার সঙ্গে যে কেউ একমত হবে। শান্তি ও ঐক্যবদ্ধ থাকা আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য।

মেহেদি হাসান: এটি বলার কারণ, মানুষ একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছে। কারণ, কিছু মানুষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।

ড. ইউনূস: না, তিনি এ প্রেক্ষাপটে বলেননি।

মেহেদি হাসান: গত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনী, বিশেষ করে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটলের গুজব ছড়িয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারে মানবিক করিডোরসহ সরকারের অনেক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেছিলেন, শুধু নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই মানবিক করিডোরের মতো সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে। তাঁর এ কথায় কি যুক্তি রয়েছে? বড় কোনো সিদ্ধান্তের জন্য কি বাংলাদেশিদের সরকার নির্বাচিত করতে হবে?

ড. ইউনূস: তিনি যা বলেছেন, সে বিষয়ে আমরা কোনো উত্তর দিতে পারব না। এখানে করিডোরের মতো কোনো বিষয় নেই, কেউ করিডোরের কথা বলেনি। তিনি কোথা থেকে এটি শুনেছেন এবং এ বিষয়ে কথা বলেছেন। নির্বাচন তাঁর চিন্তার বিষয় নয়, এটি সরকারের চিন্তার বিষয়।

মেহেদি হাসান: যেহেতু আপনি অন্তর্বর্তী সরকার, আপনার কি মনে হয় না, আপনাদের নিয়মিত বিষয়গুলোতে মনোযোগ থাকা উচিত এবং বড় সিদ্ধান্তগুলো নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেওয়া উচিত।

ড. ইউনূস: কেউ দ্বিমত করছে না। আমাদের তিনটি কাজ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো করব।

মেহেদি হাসান: খবর বের হয়েছে, আপনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন। এটি কেন?

ড. ইউনূস: আমি কিছুটা বিরক্ত ছিলাম। কারণ, কাজগুলো যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না।

মেহেদি হাসান: তো, আপনি আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা থাকছেন?

ড. ইউনূস: নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত।

মেহেদি হাসান: এরপর আপনি ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন?

ড. ইউনূস: ছেড়ে দেবো।

মেহেদি হাসান: তারপর অবসরজীবন কাটাবেন?

ড. ইউনূস: আমি কখনোই অবসরে যাইনি।