
দীর্ঘদিন পর গণমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার ঘিরে উচ্ছ্বসিত ও উজ্জীবিত দলটির নেতাকর্মীরা। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এ সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান জাতির জন্য স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রনায়কোচিত অনুপ্রেরণাদায়ক ও আবেগঘন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন তিনি।
দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিবিসি বাংলার সঙ্গে দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেছেন তারেক রহমান। সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারে প্রথম পর্ব সোমবার (৬ অক্টোবর) এবং দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান কোনো বিতর্কিত কথা না বলায় তার প্রশংসা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শিশির মনির বলেন, ‘তারেক রহমান অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে সাক্ষাৎকারে শব্দচয়ন করেছেন। সকালে উঠে বিবিসির সাক্ষাৎকার শুনেছি। অত্যন্ত গাইডেড কথা বলেছেন তিনি। সুচিন্তিত জবাব দিয়েছেন।’
শিশির মনির আরও বলেন, ‘তারেক রহমান এমনভাবে শব্দগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন, যাতে কেউ আলাদা করে কোনো শব্দ নিয়ে ভিন্ন অর্থ তৈরি করতে না পারে। তার এ সাক্ষাৎকার একটি শুভ সূচনা হিসেবে আমি মনে করি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই তার কথাবার্তা ও যে মনোভাব তিনি প্রকাশ করবেন, তা জাতির জন্য শিক্ষণীয় হবে- এটাই আমার মতামত।’
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হালিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্য বলি বা মতপ্রকাশ বা দিকনির্দেশনা যাই বলি না কেন, এ সময়ে উনার বক্তব্যটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
আব্দুল হালিম মনে করেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি পার করছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, সরকার কীভাবে গঠিত হবে— এসব নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন। তারেক রহমানের বক্তব্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই স্পষ্ট বার্তা পেয়েছে, কিভাবে আগামীতে দেশ ও সরকার পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে।’
তারেক রহমানের বক্তব্যের কোন অংশ তাকে সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে— এমন প্রশ্নে আব্দুল হালিম বলেন, ‘তিনি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এবং হিংসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ পরিচালনার কথা বলেছেন— এটাই সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক।’
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, ‘অসাধারণ। একজন ম্যাচিউরিটি লিডার। আমরা গর্বিত।’
তারেক রহমানের বক্তব্যে প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্যে আক্রমণ নেই, প্রতিহিংসা নেই। এটাই জাতি প্রত্যাশা করে।’
কোন অংশ সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে জানতে চাইলে জিলানী বলেন, “উনার উদারতা। যখন ২০২৪ সালের আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তিনি বলেছেন— ‘জনগণ’। এটাই তার উদারতা। উনার বাসভবন, ছোট ভাই, মা, পরিবার নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।’
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘অনেক বছর পর তারেক রহমান গণমাধ্যমে কথা বলেছেন— এটা রীতিমতো সারাদেশকে নাড়া দিয়েছে। এ সাক্ষাৎকারে দেশের কথা, সমন্বয়ের কথা, আবেগ ও নস্টালজিয়ার সঙ্গে দেশ গঠনের মনস্তত্ত্ব ফুটে উঠেছে।’
তারেক রহমানের বার্তায় প্রভাব প্রসঙ্গে নয়ন বলেন, ‘সবার প্রতি সম্মান রেখে কথা বলেছেন, কাউকে ছোট করেননি, জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। আমরা তাকে দেশনায়ক বলি— আজ তিনি দেশনায়কোচিত বার্তা দিয়েছেন।’
নয়নের মতে, “সবচেয়ে আবেগঘন অংশটি ছিল তারেক রহমানের পারিবারিক স্মৃতি: ‘উনি বলেছেন— আমার একটা বাসা ছিল, সুস্থ মাকে রেখে গেছি, ছোট ভাইকে রেখে গেছি।’ এই অংশে আমরা সবাই আবেগাপ্লুত হয়েছি।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমি সাক্ষাৎকারটা পুরো শুনেছি এবং পড়েছি। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তিনি সাবলীলভাবে, গুছিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এতে সবার নজর কেড়েছেন। এ সাক্ষাৎকার জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
কোন অংশ সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে? শায়রুল কবির খান বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশে আসার বিষয়ে একটি গঠনমূলক ধারণা দিয়েছেন এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যেভাবে সবাইকে যুক্ত করেছেন, সেটা বিশেষভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক।’
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘তারেক রহমান অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছেন—রাষ্ট্রনায়কোচিত। উনার বক্তব্যে সত্য বিষয়গুলো উঠে এসেছে। বিএনপির নেতা-কর্মী এবং দেশবাসী উজ্জীবিত হয়েছে।’
“বিবিসি বাংলায় ওনার বক্তব্যের শেষ অংশ, যেখানে উনি বলেন— ‘আমার বাসা ছিল, সুস্থ ভাই ছিল, সুস্থ মা ছিল’— এটা যে কোনো মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়ে যায়।” বলেন সেলিম।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্যে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে, আশান্বিত হয়েছে। আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি একজন স্টেটম্যানের মতো কথা বলেছেন।’
তিনি মনে করেন, ‘আজকের বার্তা বিএনপি এবং জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
যে অংশ তাকে নাড়া দিয়েছে তা হলো— ‘তারেক রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাসা, তার বাবা, ছোট ভাই, মা— এই প্রসঙ্গগুলো খুবই হৃদয়বিদারক।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিপক্ষ এমনকি দেশের বিশিষ্টজনদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে— তিনি জাতির প্রত্যাশার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।’
তারেক রহমানের বক্তব্যের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক অংশ সম্পর্কে আলাল বলেন, ‘তিনি বলেছেন, সুস্থ মাকে রেখে গেছেন, ছোট ভাইকে রেখে গেছেন। তিনি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন— তা শুধু ব্যক্তি নয়, বরং দেশের নির্যাতিত মানুষের সঙ্গেও একাকার হয়েছেন।’
দলের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে আলাল বলেন, ‘তারেক রহমানের বক্তব্যে ভবিষ্যতের রূপরেখা স্পষ্ট। তিনি ৩১ দফার কথা বলেছেন, সংস্কারের কথা বলেছেন, বিচারের কথা বলেছেন— যা আমাদের রাজনৈতিক যাত্রায় নতুন দিশা দেবে।’
সমগ্র প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট— বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের বক্তব্যে নতুন প্রেরণা, আত্মবিশ্বাস ও দিকনির্দেশনা পেয়েছেন। তাদের ভাষায়— ‘এটি শুধু একটি সাক্ষাৎকার নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির জন্য এক রাষ্ট্রনায়কোচিত ঘোষণাপত্র।’