
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আবরার ফাহাদ শহীদ হতে পেরেছেন, আমি পারিনি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টাযর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব: স্মরণে শহীদ আবরার ফাহাদ’ শীর্ষক সেমিনার ও “স্মরণে মননে শহীদ আবরার ফাহাদ’ চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডাকসুর উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনার ও প্রদর্শনীতে উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন শহীদ আবরারের পিতা মো. বরকত উল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম। বিশেষ অতিথি ছিলেন রেজাউল করিম রনি, আবরারের ভাই আবরার ফাইয়াজ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মো. আব্দুর রব প্রমুখ।
বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার সঙ্গে শহীদ আবরারের কিছু মিল আছে, আবার কিছু অমিলও আছে। আমরা দুজনই বুয়েটের ছাত্র, দুজনেই শেরেবাংলা হলে ছিলাম, দুজনেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। এই মিলগুলো আমার কাছে গৌরবের। তবে অমিলের জায়গা হলো- আবরার শহীদ হতে পেরেছেন, আমি পারিনি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কুষ্টিয়ায় আমাকে যারা নির্মমভাবে আক্রমণ করেছিল, তারা চেয়েছিল আমি যেন আর না বাঁচি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় আমি বেঁচে গেছি। আল্লাহ আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেননি। আবরার যে আত্মত্যাগ করেছে, তা আজ দেশের তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, তবু তিনি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ছিলেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল অটল। সেই কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার রক্ত বৃথা যায়নি, তিনি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন।
সেনাবাহিনী ও দেশের সার্বভৌমত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি দেখা গেছে বাংলাদেশের কিছু জেনারেল ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। অথচ এদের মধ্যে একজন ছিলেন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। প্রশ্ন হলো, কোনটা প্রকৃত দেশপ্রেম? ওই জেনারেলের, নাকি শহীদ আবরারের? আমার বিশ্বাস, আমাদের মুক্তির জন্য প্রয়োজন আবরারের মতো দেশপ্রেমিক তরুণ, ক্ষমতার দাস জেনারেল নয়।
‘প্রগতিশীলতা’ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা বিকৃত হয়েছে। এখানে প্রগতিশীল মানে হয়ে গেছে ইসলামবিদ্বেষী আর ভারতের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যশীলতা। এই ভণ্ড প্রগতিশীলতার মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। প্রকৃত প্রগতিশীলতা মানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ এক জটিল ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে রয়েছে, একদিকে হিন্দুত্ববাদী ভারত, অন্যদিকে মিয়ানমার। এই অবস্থায় আমাদের সংগ্রাম দীর্ঘমেয়াদি হবে। আমাদের তরুণরাই এই সংগ্রামের মূল শক্তি।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, আমি আজ আশাবাদী। কারণ তরুণরা জেগে উঠেছে। জুলাই বিপ্লবে আমরা যে জাতীয় চেতনার উত্থান দেখেছি, সেটিই প্রমাণ করে বাংলাদেশ এখন স্বাধীনতার আসল অর্থ বুঝতে শুরু করেছে। শহীদ আবরার সেই জাগরণের প্রতীক।
তিনি ডাকসু ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এমন সেমিনার ও আলোচনা আমাদের জাতীয় চেতনা জাগাতে সাহায্য করবে। আমাদের এই আলোচনা ধারাবাহিক রাখতে হবে। কারণ সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ আবরার ফাহাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে ‘স্মরণে মননে শহীদ আবরার ফাহাদ’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শন করা হয়, যেখানে তরুণ শিল্পীরা আবরারের আদর্শ ও দেশপ্রেমকে শিল্পমাধ্যমে প্রকাশ করেন।
বক্তব্যের শেষে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার বয়স অনেক হয়েছে, কিন্তু আজ আমি নতুনভাবে আশাবাদী হয়েছি। আমি তরুণদের সঙ্গে আছি- আবরারের পথেই আমাদের মুক্তির পথ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।