Image description
 

সঠিক নীতিমালা বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মাইক্রোসফটের এআই বিভাগের প্রধান মুস্তাফা সুলেইমান। 

বিবিসি রেডিও ৪-এর ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে অতিথি সম্পাদক হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, এআইয়ের বর্তমান অগ্রগতির ধারা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়াটা এখন এক ধরণের প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুলেইমানের মতে, যারা এই মুহূর্তে এআই নিয়ে সামান্যতম বিচলিত নন, তারা আসলে এই প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির দিকে সঠিক নজর রাখছেন না। তিনি মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরে এআইয়ের অগ্রগতি ‘অকল্পনীয় দ্রুতগতিতে’ হবে, যা মানবসভ্যতার জন্য যেমন সুযোগ তৈরি করবে, তেমনি তৈরি করবে অস্তিত্বের সংকট।

 

মুস্তাফা সুলেইমান, যিনি বিশ্ববিখ্যাত এআই স্টার্টআপ ‘ডিপমাইন্ড’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, স্পষ্টভাবেই বলেছেন যে বর্তমানে প্রযুক্তি খাতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা মানুষের চেয়েও অনেক বেশি বুদ্ধিমান মেশিন তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু এমন ব্যবস্থা যদি মানুষের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। 

তিনি সতর্ক করে বলেন যে, এআই যদি একবার মানুষের সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায় এবং একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তবে এই প্রযুক্তি মানুষের পক্ষে কাজ করার পরিবর্তে মানবজাতিকেই কোণঠাসা করে ফেলবে। তাই এআই ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি শক্তিশালী ‘নিরাপত্তা বেষ্টনী’ বা শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরির জন্য তিনি বিশ্বনেতা ও প্রযুক্তিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

 

বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যে এআই নিয়ে সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকি। বিশেষ করে ‘হোয়াইট কলার’ বা দাপ্তরিক পেশাজীবীদের কাজের জায়গা এআই দখল করে নিতে পারে বলে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, মাইক্রোসফট এআই প্রধানের বক্তব্য তাকে আরও জোরালো করেছে। 

মাইক্রোসফটের নিজস্ব গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী এবং অনুবাদকদের কাজগুলো এখন নিয়মিতভাবে এআই টুল দিয়ে করা হচ্ছে। এর পরেই ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে ইতিহাসবিদ, গণিতবিদ ও প্রুফ রিডারদের মতো পেশাজীবীরা। সুলেইমান মনে করেন, এআই এখন অপারেটিং সিস্টেম চালানো থেকে শুরু করে ইমেইল পাঠানো বা ফোন করার মতো কাজগুলো একজন দক্ষ প্রজেক্ট ম্যানেজার বা এইচআর কর্মকর্তার মতোই নিখুঁতভাবে করতে পারছে।

 

মুস্তাফা সুলেইমান আরও জানান যে, কল সেন্টার কর্মীদের জায়গা ইতিমধ্যে এআই দখল করতে শুরু করেছে এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্যারালিগ্যাল, জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও সাধারণ প্রজেক্ট ম্যানেজারদের মতো পদগুলো একই পরিণতির দিকে যাবে। যেহেতু একজন বুদ্ধিভিত্তিক কর্মীর মতো কাজ করা এখন এআইয়ের মাধ্যমে অনেক সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে, তাই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত অটোমেশনের দিকে ঝুঁকছে। 

এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কর্মীবাহিনীর সক্ষমতা ও কাজের গতি বাড়লেও এটি মূলত মানুষের শ্রমকে প্রতিস্থাপন করে দেওয়ার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ভবিষ্যতের ‘সুপার ইন্টেলিজেন্স’ যেন সবসময় মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে, তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

 

 

 সূত্র: ইত্তেফাক