ভারতের ওড়িশা রাজ্যে আবারও উগ্র হিন্দুত্ববাদী উন্মাদনার শিকার হলেন এক বাঙালি মুসলিম যুবক। ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে আরশাদ মল্লিক (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে একদল উগ্রবাদী যুবক।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ওড়িশার ভদ্রক জেলার চড়ম্পা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে। কোনোক্রমে পুলিশি তৎপরতায় জীবন ফিরে পেয়ে শনিবার মেদিনীপুরের নিজের বাড়িতে ফিরেছেন ভুক্তভোগী যুবক।
পুলিশের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের গোপীনাথবাটির বাসিন্দা আরশাদ মল্লিক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়া এলাকায় ভাড়া থেকে ফেরিওয়ালার কাজ করতেন। গত শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে তিনি বাইকে করে মালামাল নিয়ে ভদ্রকের দিকে যাচ্ছিলেন। চড়ম্পা স্টেশনের কাছে পৌঁছালে একদল উগ্রবাদী যুবক তাকে ঘিরে ধরে।
ভুক্তভোগী আরশাদ জানান, উন্মত্ত জনতা তাকে দেখেই ‘বাংলাদেশি’ বলে চিৎকার করতে থাকে। তারা বলতে শুরু করে, ‘‘তোরা বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা করছিস কেন?’’ আরশাদ বারবার নিজেকে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনী পুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিলেও তারা কর্ণপাত করেনি। একপর্যায়ে তাকে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়। এই নৃশংস ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওড়িশা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত অবস্থায় আরশাদকে উদ্ধার করে। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তিনি কোনোমতে বাড়িতে খবর পাঠান। এরপর বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহার নজরে আনা হয়।
মন্ত্রী শিউলি সাহা জানান, ‘‘খবর পাওয়া মাত্রই আমি নবান্নে যোগাযোগ করি। মেদিনীপুর জেলা পুলিশ ও প্রশাসন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ওড়িশা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে আরশাদকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে।’
এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় মানুষ ও মানবাধিকার কর্মীরা। ওড়িশায় সাধারণ কর্মজীবী মানুষদের ওপর এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ও ভাষাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।