যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের (অ্যাসাইলাম) আবেদনের সূচকে আবারও শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা হোম অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদনকারীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ আবেদনকারী দেশগুলোর তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এই আবেদনকারীদের মধ্যে একটি বড় অংশই প্রাথমিকভাবে স্টুডেন্ট বা ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছিলেন।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত বছরে যুক্তরাজ্যে মোট ১ লাখ ১০ হাজার ৫১ জন রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এটি আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, মোট আবেদনকারীর প্রায় ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ৪১ হাজার ৫০০ জনই ইতোমধ্যে বৈধ ভিসা বা পারমিট নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছিলেন।
পরিসংখ্যান বলছে, স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেতে ‘ভিসা পরিবর্তন’ (ভিসা সুইচিং) করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের পথ বেছে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এই তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসে আশ্রয় চেয়েছেন ১৪ হাজার ২৪৩ জন। এরপরই রয়েছে কর্মসংস্থান বা ওয়ার্ক ভিসাধারীদের অবস্থান, যার সংখ্যা ১৩ হাজার ৪২৭। অতীতে প্রতি তিন মাসে এই সংখ্যা এক হাজারের নিচে থাকলেও এখন তা প্রতি প্রান্তিকে চার হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
ভৌগোলিক দিক থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের তালিকায় আধিপত্য বিস্তার করছে পাঁচটি দেশ। প্রথমবারের মতো এই তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে পাকিস্তান (১১ শতাংশ)। এরপর রয়েছে যথাক্রমে ইরিত্রিয়া (৮ শতাংশ), ইরান (৭ শতাংশ), আফগানিস্তান (৭ শতাংশ) এবং বাংলাদেশ (৬ শতাংশ)। গত পাঁচ বছর ধরেই বাংলাদেশ এই তালিকার শীর্ষ পাঁচে অবস্থান করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতাই এই আবেদন বৃদ্ধির মূল কারণ।
এই চিত্র যুক্তরাজ্যের পয়েন্ট-ভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টির শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলপ এই প্রবণতাকে ‘সিস্টেমের অপব্যবহার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, স্টুডেন্ট ও ওয়ার্ক ভিসাকে ব্যবহার করে স্থায়ী হওয়ার এই প্রক্রিয়াটি ‘শিল্প মাত্রার’ জালিয়াতিতে রূপ নিয়েছে। তিনি আশ্রয়ের আবেদনগুলো আরও কঠোরভাবে যাচাইয়ের দাবি জানান।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ হোম অফিস জানিয়েছে তারা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ওপর ভিজিট ভিসা কড়াকড়ি করার ফলে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে আশ্রয়ের আবেদন ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে। আবেদনের বিশাল চাপ থাকলেও ২০২৩ সালের তুলনায় ঝুলে থাকা আবেদনের জট ৫৪ শতাংশ কমেছে। তবে এখনও ৬২ হাজার ২০০টির বেশি আবেদন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
পূর্ব লন্ডনের চ্যান্সারি সলিসিটরসের কর্ণধার ব্যারিস্টার মো. ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমান লেবার সরকার ‘বর্ডার সিকিউরিটি অ্যান্ড অ্যাসাইলাম বিল’ পাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা বজায় রেখে কীভাবে অবৈধ আশ্রয়ের পথ বন্ধ করা যায়, সেটিই এখন ব্রিটিশ সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, কিছু ভুয়া আবেদনের কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত আবেদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।