গোয়েন্দা প্রযুক্তিতে নতুন চমক দেখাল চীন। দেশটি এমন একটি লেজারভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা উন্মোচন করেছে, যা এক মাইলেরও বেশি দূর থেকে লেখা পড়তে কিংবা বস্তু থেকে শব্দ পুনর্গঠন করতে সক্ষম—তাও লক্ষ্যস্থলে প্রবেশ না করেই।
কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?
চীনের এই নজরদারি ব্যবস্থা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজার ব্যবহার করে। লেজার রশ্মি জানালার কাচ, কাগজ, বইয়ের মলাট বা অনুরূপ কোনো পৃষ্ঠে পড়লে সেখানে সৃষ্ট অতি সূক্ষ্ম কম্পন (microscopic vibrations) শনাক্ত করা হয়।
এই কম্পনগুলো পরবর্তীতে—
-
পাঠযোগ্য লেখায় রূপান্তর করা যায়
-
কিংবা শব্দ বা কথোপকথন পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়
অর্থাৎ, কোনো কক্ষের ভেতরে ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন না বসিয়েই সেখানে থাকা তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
স্পর্শ ছাড়াই নজরদারি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি সম্পূর্ণ কন্টাক্টলেস। লক্ষ্যবস্তুতে কোনো ধরনের যন্ত্র স্থাপন বা সরাসরি প্রবেশের প্রয়োজন হয় না। ফলে—
-
কোনো দৃশ্যমান চিহ্ন থাকে না
-
প্রচলিত কাউন্টার-সারভেইলেন্স পদ্ধতিতে এটি শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন
গোয়েন্দা ও সামরিক ক্ষেত্রে বড় প্রভাব
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রযুক্তি গুপ্তচরবৃত্তি, সন্ত্রাস দমন এবং সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। সিল করা কক্ষ থেকেও তথ্য সংগ্রহের সক্ষমতা গোয়েন্দা অভিযানে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ
তবে প্রযুক্তিটির উত্থান নিয়ে গোপনীয়তা ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে—
-
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়তে পারে
-
নজরদারির সীমা কোথায় হওয়া উচিত—এ প্রশ্ন আরও তীব্র হবে
এই উন্নয়ন বিশ্বজুড়ে নজরদারি আইন, নৈতিকতা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও জোরালো করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রযুক্তির অগ্রগতি, প্রশ্নও বাড়ছে
চীনের এই ‘স্পাই লেজার’ প্রযুক্তি প্রমাণ করে, আধুনিক যুগে নজরদারি কেবল ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনেই সীমাবদ্ধ নেই। তবে একই সঙ্গে এটি তুলে ধরছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—প্রযুক্তির ক্ষমতা যত বাড়ছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা কি ততটাই নিশ্চিত থাকছে?