
তোমরা নতুন একটি রাজনৈতিক দল চাইছ এবং তোমরা তা পাবে! জুলাইয়ের শুরুতে টুইটারে এমন ঘোষণা দেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অপচয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশকে দেউলিয়া করার ব্যাপারে আমরা আসলে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় বাস করছি, গণতন্ত্রে নয়। আজ ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হলো- তোমাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। ইলন মাস্কের আশা, ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের বাইরে তার দল একটি কার্যকর বিকল্প হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তিনি দুই থেকে তিনটি সিনেট ও ১০টি প্রতিনিধি পরিষদের আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা করছেন।
কংগ্রেসে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যকার টানাটানির কারণে এই সামান্য সংখ্যক আসনও ‘বিতর্কিত আইন পাসে নিয়ামক ভূমিকা রাখতে পারবে’ বলে তার বিশ্বাস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
জনমত জরিপে বহুবার দেখা গেছে, আমেরিকান জনগণ তৃতীয় একটি বিকল্প রাজনৈতিক দলের পক্ষে। তাহলে কি মাস্কের উদ্যোগ সফল হবে? এর জবাবে মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বার্নার্ড টামাস বলেন- না। ভ্যালডোস্টা স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও দ্য ডিমাইজ অ্যান্ড রিবার্থ অব আমেরিকান থার্ড পার্টিজ বইয়ের লেখক টামাস। তিনি বলেন, বর্তমান আমেরিকান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো নতুন দল কংগ্রেসে আসন জিতবে- এমন কোনো প্রমাণ নেই। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের শুধু অর্থই নয়, তাদের আছে বিশাল সাংগঠনিক কাঠামো, পেশাদার রাজনীতিক, কনসালট্যান্ট এবং অ্যাডভারটাইজিং কোম্পানির জোট।
মাস্ক ও ট্রাম্পের মধ্যে আলোচিত দ্বন্দ্বের পরপরই এই ‘আমেরিকা পার্টি’র আইডিয়া কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশ্যে আসে। প্রতিশোধ ও রাগ থেকে যেসব ধারণার জন্ম হয়, সেগুলোর অনেক সময় পরিকল্পনা স্পষ্ট থাকে না- এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকাপার্টি ডট কম ডোমেইনটি আগে থেকেই অন্য কারো নামে রেজিস্টার্ড ছিল। সেই ব্যক্তি এখন এটি ৬.৯ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করতে চান। মাস্কের মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-জিআই @AmericaPart হ্যান্ডেলটি অন্যের দখলে। ফলে নতুন উদ্যোগকে @AmericaPartyX নামে চালু করতে হয়। এখন পর্যন্ত এই পার্টির আদর্শ, লক্ষ্য বা নির্বাচনী ইস্যু পরিষ্কার নয়। শুধু বলা হয়েছে, রিপাবলিকানদের ঋণ বৃদ্ধির বিরোধিতা করা হবে। ‘বিতর্কিত আইন’ বলতে তারা কী বোঝায়, সেটিও স্পষ্ট করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় দলগুলো খুব কমই বড় ধরনের নির্বাচনী সাফল্য পেয়েছে। তবে তারা মূলত আলোচনায় নতুন বিষয় তুলে ধরে এবং প্রধান দুই দলকে চাপ দিয়ে পরিবর্তনে বাধ্য করে। বার্নার্ড টামাস বলেন, তৃতীয় দলগুলোর কাজ হলো ব্যথা দেয়া। তারা জেতার জন্য নয়, বরং রাজনীতিকে নাড়িয়ে দেয়ার জন্য। তিনি উইসকনসিনের প্রগ্রেসিভ পার্টি ও মিনেসোটার ফার্মার-লেবার পার্টির কথা বলেন, যারা রাজ্যস্তরে বেকারদের সহায়তা ও ব্যাংক সংস্কারে সফল হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে রিপাবলিকান পার্টি ক্রমশ ডানপন্থী ও মেগা ধ্যানধারণার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সময়টা একটি তৃতীয় দলের জন্য আদর্শ সুযোগ। কিন্তু তাদের কাজ হলো এই প্রবণতার সমালোচনা করে মূলধারাকে মাঝামাঝি অবস্থানে ফিরিয়ে আনা। তৃতীয় দল হিসেবে রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করার চেয়ে যেসব দল ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছে, তাদের সফলতা তুলনামূলক কম।