
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন একটি অজ্ঞাত পরিচয় ওয়েবসাইট 'ক্যানারি মিশন' এর সহযোগিতায় প্রো-প্যালেস্টাইন শিক্ষার্থী ও একাডেমিকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা বাতিল ও ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। আদালতে উন্মোচিত নতুন নথিপত্রে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে।
এই 'ক্যানারি মিশন' ওয়েবসাইটটি মূলত নিজেকে “অ্যান্টি-ইসরায়েল ও অ্যান্টিসেমিটিক কর্মকাণ্ড উন্মোচনকারী” হিসেবে দাবি করলেও, বাস্তবে এটি বিভিন্ন প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনকারীর নাম, ছবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য ও প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার ইতিহাস প্রকাশ করে। এটি কার্যত "ডক্সিং" অর্থাৎ কাউকে সামাজিকভাবে বিপদে ফেলা ও টার্গেটে পরিণত করে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ একটি “টাইগার টিম” গঠন করে যাদের কাজ ছিল এমন ১০০ জন শিক্ষার্থী ও স্কলারকে শনাক্ত করা যারা প্যালেস্টাইনের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। আদালতের এক সাক্ষ্যে বলা হয়, এই ১০০ জনের মধ্যে ৭৫ জনকেই 'ক্যানারি মিশন' ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছিল। যদিও ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা সরকারের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তা পিটার হ্যাচ স্বীকার করেছেন, "অনেক নামই এসেছে ক্যানারি মিশন থেকে", তবে সরকার নিজস্ব যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও তিনি স্বীকার করেন, “আমরা জানি না এই ওয়েবসাইট কে চালায়”।
এই তালিকায় আরও একটি নাম উঠে আসে—‘বেতার ইউএসএ’। তারা ‘Jews Fight Back’ স্লোগান ব্যবহার করে এবং প্রকাশ্যে “ডিপোর্ট লিস্ট” প্রকাশ করেছে, যেখানে উল্লেখ রয়েছে— তারা ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে সরাসরি তালিকাটি তুলে দিয়েছে। ৩০ জানুয়ারি এক্সে (Twitter) তারা একটি টুইটে দাবি করে, "মোহাম্মদ খালিল, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আমাদের ডিপোর্ট লিস্টে আছেন। আমরা তার বাড়ির ঠিকানা ICE-কে দিয়ে দিয়েছি।"
এই ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র মোহাম্মদ খালিল এক প্রো-প্যালেস্টাইন অ্যাকটিভিস্ট যিনি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট। তাকে ৩ মাসের বেশি সময় ইমিগ্রেশন হেফাজতে রাখা হয়। তার আইনজীবীরা ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট (FOIA) অনুসারে আবেদন করেন, যাতে তদন্ত করা যায় এই ওয়েবসাইটের তথ্য কীভাবে সরকার ব্যবহার করেছে।
নাদিয়া আবু এল-হাজ, বার্নার্ড কলেজ ও কলম্বিয়ার একজন অ্যানথ্রোপোলজি অধ্যাপক, বলেন তার নিজের নামও 'ক্যানারি মিশনে' তালিকাভুক্ত। যদিও তিনি আমেরিকার নাগরিক, তাই ভয় না পেয়ে আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের সময় মার্চ মাসের অভিযানের পর অনেক শিক্ষার্থী জনসমক্ষে আসা বন্ধ করে দেয়, ভীত হয়ে পড়ে।”
এই পুরো ঘটনা আমেরিকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতর একটি নতুন ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। ভিসা পাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীরা কেবল মতপ্রকাশের জন্যই আজ হুমকির মুখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি বিপজ্জনক নজির যেখানে বেসরকারি “ছায়া ওয়েবসাইট”-এর তথ্য ব্যবহার করে সরকার শিক্ষার্থীদের ‘টার্গেট’ করেছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।