
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে নতুন করে সহিংসতার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বালুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (BLF) শুরু করেছে একটি সুসংগঠিত সামরিক অভিযান, যার নাম “অপারেশন বাম”—যার অর্থ “প্রভাত” বা “ভোর”। এই অভিযানের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার (৯ জুলাই) সকাল পর্যন্ত প্রদেশটির বিভিন্ন জেলায় ১৭টি পৃথক হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।
সবচেয়ে আলোচিত হামলাটি ঘটেছে কেচ জেলার টুরবাট শহরের আবসার এলাকায়, যেখানে এক বাড়িতে মোটরসাইকেলে এসে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে সন্ত্রাসীরা। এতে হাজরা, মাহলাব, ফাতিমা, নাজ গুল এবং মোহাম্মদ ইব্রাহিম নামের বাসিন্দারা আহত হন এবং দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই দিনে সিবি শহরের একটি পুলিশ চেকপোস্টেও গ্রেনেড হামলা হয়, তবে সেখান থেকে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এই হামলাগুলোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে বালুচ প্রতিরোধের একটি নতুন অধ্যায়, বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির মুখপাত্র মেজর গওহরাম বালুচ। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই অভিযান প্রমাণ করে বালুচ যোদ্ধারা একযোগে বিস্তৃত এলাকায় বড় ধরনের সামরিক অপারেশন চালাতে সক্ষম। তিনি আরও জানান, এই অভিযান শুধু মানবিক ক্ষয়ক্ষতি নয়, প্রশাসনিক কাঠামো ও অবকাঠামোর ওপরও উল্লেখযোগ্য আঘাত হানছে।
অপারেশন বামের আওতায় পাঞ্জগুর, সুরাব, কেচ ও খারান জেলার সেনা ঘাঁটি, পুলিশ পোস্ট, টেলিকম টাওয়ার, সরকারি অফিস ও রাস্তায় লক্ষ্য করে সমন্বিত হামলা চালানো হয়েছে। এর ফলে কেচ ও পাঞ্জগুরে আংশিক টেলিকম ব্ল্যাকআউট দেখা দিয়েছে, মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এই সহিংসতা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত এলাকায় সেনা টহল ও চেকপোস্ট সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বালুচিস্তান প্রদেশটি খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ হলেও, সেখানকার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য, নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরিয়ে না দেওয়া এবং অবহেলিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিযোগ করে আসছে। এই প্রেক্ষাপটেই বিএলএফসহ একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী দুই দশকের বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে।