Image description
 

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য নতুন করে অতিরিক্ত ৫১৬ কোটি টাকার অনুমোদন চেয়েছে। এর আগে এ প্রকল্পের ব্যয় কয়েক দফা সংশোধনের পর ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার বেশি হয়ে গেছে। অনুমোদিত হলে নতুন মোট সংশোধিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা।

 

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ঢাকার ৩০টি জেলার সঙ্গে সংযুক্ত এবং শিল্প এলাকার যানজট কমানোর লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল এবং ঢাকা ইপিজেড এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে জমি অধিগ্রহণের জন্য তহবিল বরাদ্দ ছিল না। এখন সেতু বিভাগ প্রকল্পটি অনুমোদনের আট বছর পরে অতিরিক্ত অর্থায়নের জন্য আবেদন করে।

 

 

পরিকল্পনা কমিশনকে লেখা এক চিঠিতে সেতু বিভাগ সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় তহবিল ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের ৯ কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ অংশের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে চুক্তির শর্তাবলি অনুসারে ঠিকাদাররা উল্লেখযোগ্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে।

 

ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সেতু বিভাগ বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে ইউটিলিটি স্থানান্তর ও স্টক ইয়ার্ড হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে নতুন জমির ভাড়া পরিশোধের জন্য এ ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

 

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল। ওই সময় প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার র‍্যাম্প নির্মাণ করা।

 

তবে নির্মাণকাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সময়সীমা আরো চার বছর বাড়ানো হয়েছে। ফলে সংশোধিত সমাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা এখন ২০২৬ সালের জুনে নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পে ৯৬ দশমিক ৯২ বিলিয়ন টাকার চীনা ঋণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সম্প্রসারণ এবং অতিরিক্ত তহবিল সত্ত্বেও, প্রকল্পটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রকল্পের সামগ্রিক ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৬৮ শতাংশ। অথচ বর্ধিত সময়সীমার আর মাত্র এক বছর বাকি আছে।

আর্থিক অগ্রগতিও ধীরগতিতে রয়ে গেছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের মাত্র ৫৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ব্যয় হয়েছে।

 

আইএমইডির প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, অবশিষ্ট কাজ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম।

 

প্রতিবেদনে চিহ্নিত প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো গ্যাস পাইপলাইন, বিদ্যুৎ তার, পানির পাইপ এবং টেলিকম সংযোগসহ ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের জটিলতা। এই সমস্যাগুলো বারবার নির্মাণ কার্যক্রম ব্যাহত করেছে।

 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) তহবিল থাকা সত্ত্বেও, ইউটিলিটি স্থানান্তর সম্পন্ন হওয়ার আগেই নির্মাণকাজ শুরু করার অনুমতি দেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ঘন ঘন কাজ বন্ধ হয়ে যায়, কারণ স্থানান্তরিত না হওয়া ইউটিলিটি লাইনগুলো বিভিন্ন অংশে নির্মাণকাজকে বাধাগ্রস্ত করে। আইএমইডি রিপোর্ট অনুসারে, আশুলিয়া, বাইপাইল এবং নবীনগরসহ ২৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো নির্মাণের জন্য উপযোগী নয়। ফলে পাইলিং, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং র‍্যাম্প স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।

 

অপর্যাপ্ত ইউটিলিটি ম্যাপিং

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরিচালিত প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষারও সমালোচনা করা হয়েছে। যা ভূগর্ভস্থ এবং ওভারহেড ইউটিলিটি লাইনগুলো সঠিকভাবে ম্যাপ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

 

এই তদারকির ফলে সঠিক ইউটিলিটি স্থানান্তর পরিকল্পনার অনুপস্থিতি দেখা দেয় এবং নির্মাণের সময় বারবার ব্যাঘাত ঘটে।

আইএমইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ইউটিলিটি স্থানান্তরে বিলম্ব কেবল প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, বরং পরিকল্পনা, সমন্বয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার পদ্ধতিগত ত্রুটিও প্রতিফলিত করে। যদি এই সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান না করা হয়, তাহলে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে অব্যবস্থাপিত অবকাঠামো উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে ওঠার ঝুঁকিতে পড়বে।

 

এই চ্যালেঞ্জগুলো ছাড়াও, মূল পরিকল্পনা থেকে বাদ পড়া বেশ কিছু উপাদান পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যোগাযোগের সুবিধার্থে ১৫ দশমিক ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাট-গ্রেড সার্ভিস রোড, যোগাযোগ উন্নত করার জন্য দুটি নতুন দুই লেনের সেতু এবং নবীনগরে একটি নতুন ফ্লাইওভার যা এক্সপ্রেসওয়েকে বিদ্যমান সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে আরো ভালোভাবে সংযুক্ত করবে। এ ছাড়া সংশোধিত পরিকল্পনায় ইলেকট্রনিক টোল সংগ্রহ (ইটিসি) সিস্টেম, প্রশাসনিক ভবন এবং নিরাপত্তা সুবিধাসহ আধুনিক টোল প্লাজা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।