Image description
 

সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণাপত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে নয় বিএনপি। দলটি বলেছে, তারা জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চান। এ জন্য ঘোষণাপত্রের পুরোটা না নিয়ে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে শুধু ‘জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪’ যুক্ত করা যেতে পারে বলে মনে করে বিএনপি।

 

সাংবিধানিক নয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি। দলটি জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে একমত নয়।

 

বিএনপি নেতারা মনে করেন— ঘোষণাপত্রের পুরোটা না নিয়ে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের চেতনাটুকু ধারণ করে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে শুধু ‘জুলাই অভ্যুত্থান-২০২৪’ আনা যেতে পারে। দলটি মনে করে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র প্রণীত হওয়ার পর রাষ্ট্র যথাযথ প্রসিডিউর অনুযায়ী এটিকে আর্কাইভ (সংরক্ষণ) করবে।

  

বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন মত উঠে এসেছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বিএনপির কাছে পাঠানো জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে দলীয় মতামত চূড়ান্ত করতে স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সংবিধানে স্থান দেয়া হলে তাতে ভবিষ্যতে জটিলতা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে কেউ কেউ আবার স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানকেও সংবিধানে রাখার দাবি তুলতে পারে। আলোচনা-পর্যালোচনার পর ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি।

 

বুধবার রাতেই খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এনে তা চূড়ান্ত করে এর একটি কপি ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার কাছে প্রেরণ করেছে দলটি।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খসড়ার প্রথম পয়েন্টে উল্লিখিত ‘বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এ ভূখণ্ডের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রাম করেছিল এবং এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সাল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল’-এই অংশ অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে তা বিএনপি বাদ দিয়েছে।

দলটির নেতারা বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধকেই প্রধান অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে ঘোষণাপত্র শুরু হওয়া উচিত।

খসড়া ঘোষণাপত্রের একটি পয়েন্টে আছে- ‘যেহেতু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শাসনামলে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনির্মাণের ব্যর্থতা ও অপর্যাপ্ত ছিলো এবং এ কারণে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও শাসকগোষ্ঠীর জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি’-বিএনপি এ ক্ষেত্রে ‘বিভিন্ন শাসনামলের জায়গায়’ ‘আওয়ামী শাসনামলের’ কথা উল্লেখ করেছে।

খসড়ায় এক-এগারো সংশ্লিষ্ট একটি পয়েন্টে উল্লিখিত ‘ক্ষমতার সুষ্ঠু রদবদলের রাজনৈতিক ব্যর্থতার সুযোগে’ কথাগুলো পরিবর্তন করে ‘দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সুযোগে’ লেখার সুপারিশ করেছে বিএনপি।

এছাড়া দলটি ১৯৭২ সালের ‘সংবিধান পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায়’ বাদ দিয়ে ‘বিদ্যমান সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন’ করার পক্ষে মত দিয়েছে।

জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের খসড়া থেকে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রসঙ্গটি বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রের খসড়ার শেষ অংশে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ কথাটি উল্লেখ ছিল। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এর বাইরেও খসড়ায় আরো কিছু শব্দগত সংযোজন-বিয়োজন করেছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থান- ২০২৪ এর গুরুত্ব, মর্যাদা, মহিমা ধারণ করি। আমরা এটাকে স্বীকৃতি দিই, পুরো জাতি এটাকে স্বীকৃতি দেয়। এটাকে আমরা যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে চাই। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্র হলো-এটার রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকে, এটা আর্কাইভে থাকে। এটাকে জাতি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে উল্লেখ করে, স্মরণ করে।

সরকার ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আর এটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে।