
শিশুশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন শ্বেতা বসু প্রসাদ। শুরুতেই গগনচুম্বী সাফল্য। ২০০২ সালে ‘মকড়ি’ চলচ্চিত্রে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ৩৪ পেরোনো অভিনেত্রী শ্বেতা বসু প্রসাদের জীবন যেন বাস্তবের এক চলচ্চিত্র।
জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিশু অভিনেত্রী হিসেবে প্রশংসিত হলেও ব্যক্তিগত জীবনে এক পর্যায়ে তাকে পেরোতে হয়েছে অন্ধকার সময়। তবে সব বাধা পেরিয়ে আজ তিনি আবারও আলোচনায়—তার দৃঢ় প্রত্যয় আর সাহসী প্রত্যাবর্তনের কারণে।
২০০২ সালে বিশাল ভরদ্বাজের ‘মাকড়ি’ সিনেমায় দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন শ্বেতা। ছোট বয়সেই তার অভিনয়ের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়েছিল সমালোচকরা। কিন্তু কিশোরী বয়স পেরিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেত্রী হিসেবে তার পথ সহজ ছিল না।
২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট হায়দরাবাদের বানজারা হিলস এলাকার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে। এ ঘটনা তখন ভারতজুড়ে আলোড়ন তোলে। যদিও শ্বেতা তখন দাবি করেছিলেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখতে অনেক অভিনেত্রীকে নানা ধরনের আপস করতে হয়—যা বলিউডে একটি খোলা গোপন সত্য।
তবে তদন্তে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে আদালত থেকে তিনি সম্পূর্ণ অব্যাহতি পান। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খারিজ করে দেওয়া হয় এবং ধীরে ধীরে তিনি ফিরে আসেন স্বাভাবিক জীবনে।
অভিনয়জগতে ফেরাটা সহজ ছিল না। অনেক প্রতিকূলতা ও সমালোচনা সত্ত্বেও শ্বেতা হাল ছাড়েননি। ২০১৯ সালে ‘দ্য তাশখন্দ ফাইলস’ সিনেমায় তার অভিনয় সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর ২০২২ সালে বিতর্কিত ও জনপ্রিয় সিনেমা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এও তাকে দেখা যায়।
শুধু চলচ্চিত্র নয়, ওয়েব সিরিজের জগতেও নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন তিনি। ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস’-এর চতুর্থ সিজনে তিনি পঙ্কজ ত্রিপাঠীর সঙ্গে অভিনয়ে প্রশংসিত হন। পাশাপাশি, ভারতীয় বাংলা সিনেমা ‘এক নদীর গল্প’-তে মিঠুন চক্রবর্তী ও যিশু সেনগুপ্তর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় নজর কাড়েন।
আজ শ্বেতা বসু প্রসাদের জীবন শুধু একটি অভিনেত্রীর ক্যারিয়ার নয়, বরং একটি প্রেরণাদায়ী গল্প—যেখানে আছে উত্থান, পতন ও আবার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি। তিনি প্রমাণ করেছেন, বিতর্ক সবসময় শেষ কথা নয়—প্রতিভা, অধ্যবসায় ও ইচ্ছাশক্তিই কাউকে সত্যিকারের জয়ী করে তোলে।