Image description

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক প্রক্টর এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রো-ভিসি) পদে নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত ১২ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-২ শাখার সহকারী সচিব শাহ আলম সিরাজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামী চার বছর তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন।

২০২৪ সালের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শাবিপ্রবির প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন ইশরাত। ছাত্রদের চোখে তিনি ছিলেন আওয়ামীমুখী প্রশাসনের প্রতীক। অথচ সেই বিতর্কিত অতীত নিয়েও তিনি আবারও ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় নতুন পদোন্নতি পেলেন। বর্তমানে তিনি মেট্রোপলিটনে ডিরেক্টর একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স পদে কর্মরত ছিলেন।

শিক্ষক মহলে ইশরাতের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কোনো গোপন বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষশক্তির ব্যানারে তিনি একাধিকবার সমিতির নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। শাবিপ্রবির তৎকালীন আওয়ামীপন্থী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, সালেহ উদ্দিন বিএনপি নেতা মরহুম সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

শাবিপ্রবির নিয়ম অনুযায়ী, অন্যত্র চাকরি করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিতে হয় এবং বেতনের ১৫ শতাংশ শাবিপ্রবির তহবিলে জমা দিতে হয়। কিন্তু ইশরাত তা মানেননি। শাবিপ্রবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়েই তিনি মেট্রোপলিটনে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন।

আরও জানা যায়, কোনো যোগ্যতা ছাড়াই ২০০৯ সালে তাকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পেছনে কাজ করেছিলেন তৎকালীন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন কামরান এবং মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী।

ইশরাতকে প্রথম থেকেই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ছত্রচ্ছায়ায় এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। দলীয় ঘনিষ্ঠতা এবং রাজনৈতিক আনুগত্যই মূলত তাকে এই অবস্থানে এনে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা।

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা ইশরাতকে এনওসি প্রদান করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে “ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন প্রকল্প” চালু করা হয়েছে।

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও একই ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীপন্থী মালিকপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে “পতিত স্বৈরাচারদের কার্যালয়ে” পরিণত করছে।

বিষয়টি নিয়ে ইশরাত ইবনে ইসমাইলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।