
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। এবারের ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ইসলামী ছাত্রশিবির, স্বতন্ত্রসহ আট প্যানেলের মধ্যে লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন নামে চারটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যরা প্যানেল ঘোষণা করবে আজ। এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিমত-বিশেষ কোনো প্যানেলে ভোট নয়, যোগ্য ব্যক্তিকেই পছন্দের তালিকায় অগ্রাধিকারে দেওয়া হবে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে। ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে ৬৫৮টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। আর হল সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৮টি হলে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪২৭টি মনোনয়নপত্র। আজ বিকাল ৫টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে প্রার্থীদের।
হলভিত্তিক মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে সর্বাধিক ১১২টি এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে সর্বনিম্ন ৩৩টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৭৩, জগন্নাথ হলে ৭৪, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৮৬, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১০০, রোকেয়া হলে ৫৩, সূর্যসেন হলে ৯৫, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৮০, শামসুন নাহার হলে ৪২, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১০৬, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৯৮, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৭৯, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৯, অমর একুশে হলে ৯১, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৮৮, বিজয় একাত্তর হলে ৯৬ এবং স্যার এএফ রহমান হলে ৮২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একজন প্রার্থী একাধিক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। তবে একজন প্রার্থী কেবল একটি পদেই নির্বাচন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একটি পদ রেখে বাকিগুলোয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হবে। প্রত্যাহার না করলে সব মনোনয়নপত্রই বাতিল বলে গণ্য হবে।
দীর্ঘ ছয় বছর পর ৯ সেপ্টম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনি আবহে উৎসবমুখর হয়ে উঠে ঢাবি ক্যাম্পাস। আজ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন। এরপর ২০ আগস্ট মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে ২১ আগস্ট প্রকাশ করা হবে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৪ আগস্ট দুপুর ১২টা এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ আগস্ট বিকাল ৪টায়।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে আটটি প্যানেল বিভিন্ন নামে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’, ছাত্রশিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’, বামপন্থি শিক্ষার্থীদের ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ (পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে), ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ (পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকারের স্বতন্ত্র প্যানেল ‘ডিইউ ফার্স্ট’। আর ইসালামী ছাত্র আন্দোলন পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করলেও নাম দেয়নি। আর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাদের প্যানেলের নাম ও প্রার্থীদের চূড়ান্ত করতে পারেনি। প্যানেলের প্রার্থী নিয়ে একাধিক সভা হলেও তারা তারেক রহমানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। আজই প্যানেল ঘোষণা হওয়ার কথা।
এদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির সবার আগে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। কারণ, তারা শুধু তাদের দলকেন্দ্রিক প্যানেল ঘোষণা করবে বলে ধারণা করা হলেও শিবিরের প্যানেলে স্থান পেয়েছেন চার নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী এবং একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী।
ক্যাম্পাসে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি ক্যাম্পসজুড়ে জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে চালাচ্ছেন জনসংযোগ। অনেক প্রার্থী ইশতেহার তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের মতামত যাচাই-বাছাই করছেন। মাঠের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ফটোকার্ড, লেখা এবং ভিডিওতেও চলছে প্রচারণা। এদিক প্রায় কয়েক ডজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন তারা।
আরিফুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচন ঘোষণার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের কদর বেড়ে গেছে। তবে সুসময়ের মাছিদের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবে না। জুলাই আন্দোলনে যারা সম্মুখসারিতে ছিলেন এবং ৫ আগস্টের পর কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়াননি, তাদেরই ভোট দেব।
আছিয়া খাতুন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোনো বিশেষ প্যানেলকে ভোট দেব না। বরং যোগ্য প্রার্থী যেই প্যানেলেরই হোক, তাদের ভোট দেব। যারা আমাদের ভোট পেতে চান, তাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে ছাত্ররাজনীতিকে অবশ্যই শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক করতে হবে।
এদিকে সোমবার রাতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় একদিন বৃদ্ধি করায় ছাত্রদলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। ঢাবি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদ মঙ্গলবার নওয়াব নবাব আলী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডাকসু মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলে সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি এবং আজ আমার জমা দিয়েছি। কাল থেকে কয়েকটি বিষয় দুঃখজনকভাবে লক্ষ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ করে একদিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিন বাড়াল।
শিবিরের অন্তর্ভুক্তিমূলক পূর্ণাঙ্গ প্যানেল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি ভিপি হিসাবে কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি এসএম ফরহাদ মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস পদে ঢাবি শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান নির্বাচন করবেন। শিবিরের প্যানেলে স্থান পয়েছেন চার নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী এবং একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে রয়েছেন ইকবাল হায়দার, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে সালমা এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে খান জসীম, যিনি চলতি বছরের জুলাইয়ে চোখ হারান। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রয়েছেন নুরুল ইসলাম সাব্বির, যিনি বর্তমানে ঢাবি শিবিরের অর্থ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে আসিফ আব্দুল্লাহ এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন শরিফুল ইসলাম মুয়াজ। এছাড়া গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ঢাবি শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন খান, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া। ঘোষিত প্যানেলে আরও ১৩টি সদস্য পদ রাখা হয়েছে। সদস্যপদে রয়েছেন সর্ব মিত্র চাকমা, ইমরান হোসাইন, বেলাল হোসেন অপু, জয়েন উদ্দিন সরকার তন্ময়, মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ, মাজহারুল ইসলাম মুজাহিদ, রাইসুল ইসলাম, সাবিকুন নাহার তামান্না, শাহিউর রহমান, আফসানা আক্তার, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রায়হান উদ্দিন ও আনাস বিন মনির।
বাম ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ নামে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্যানেল ঘোষণা করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের আহ্বায়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি মেঘমল্লার বসু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হকসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষিত প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মেঘমল্লার বসু। সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাবির আহমেদ জুবেল। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়বেন মোজাম্মেল হক। এছাড়া কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে নূজিয়া হাসিন (রাশা), মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে আকাশ আলী, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে লিটন ত্রিপুরা, সমাজসেবা সম্পাদক পদে আবু মুজাহিদ, পরিবহণ সম্পাদক পদে নিনাদ খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক পদে নাঈম উদ্দীন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ফারিয়া মতিন (ইলা), ক্রীড়া সম্পাদক পদে মালিহা তাবাসসুম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে শেখ তাসনুভা সৃষ্টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাক এবং গবেষণা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে আমানত ইমরান। বাকি ১৩টি সদস্য পদে লড়বেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মো. তফসিরুল্লাহ, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ রাজেকুজ্জামান জুয়েল, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজের ওয়াকার রহমান সৌরভ, অর্থনীতি বিভাগের মোহাম্মদ মুস্তাকিম, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারিবিলিটি স্টাডিজের মিশকাতুল মাশিয়াত (তানিশা), কারুশিল্প বিভাগের আতিকা আনজুম অর্থী, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের পৃথিং মারমা, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসের ইসরাত জাহান ইমু, নৃবিজ্ঞান বিভাগের আনিয়া ফাহমিন, পদার্থ বিজ্ঞানের রাহনুমা আহমেদ নিরেট, প্রাচ্যকলা বিভাগের সাজিদ উল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিভাগের হেমা চাকমা এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের আলমগীর হোসেন।
মনোনয়নপত্র নিলেন ছাত্রদল নেতারা, প্যানেলে পদ ঠিক করবেন তারেক রহমান : সোমবার দুপুরের পর থেকে মঙ্গলবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একাধিক নেতাকে আলাদা আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে দেখা যায়। ছাত্রদলের নেতারা জানান, সংগঠন থেকে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তারা একক প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে কে কোন পদে প্রার্থী হবেন, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। আজ রাতের মধ্যে প্যানেল চূড়ান্ত হতে পারে।
ভিপি পদে মনোনয়নপত্র নেন বিএম কাউসার, আবিদুল ইসলাম খান, মমিনুল ইসলাম জিসান, মাহমুদুল হাসানসহ একাধিক নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অন্য নেতাদের মধ্যে ওবায়দুল্লাহ রেদওয়ান সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এবং জারিফ রহমান তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বলে জানা গেছে। জিএস পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন তানভীর বারী হামিম।
প্যানেল চূড়ান্তে দেরি হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তানভীর বারী হামিম বলেন, ছাত্রদল বৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠন। দুই দশকে অনেক শিক্ষার্থী ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন। ২৮টি পদের বিপরীতে ছাত্রদলের প্রায় ৪০০ প্রার্থী রয়েছেন। যোগ্যতায় কেউ কারও থেকে পিছিয়ে নেই। যে কারণে চূড়ান্ত হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন শুধু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছি। তবে কারা কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেবেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ডাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেল গঠিত হবে।
ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সংগঠনটির ভেতরে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে শেষ সময়ে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে আবিদুল ইসলাম খান আবিদ সহসভাপতি (ভিপি) ও শেখ তানভীর বারী হামিম সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রদলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেতে পারেন।
‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে লড়বে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। তবে এই প্যানেল থেকে কে কোন পদে নির্বাচন করবেন, সেটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে সূত্র জানায়, ভিপি পদে আব্দুল কাদের, জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার এবং এজিএস পদে আশরেফা খাতুন নির্বাচন করতে পারেন। সোমবার বিকালে এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরসহ সংগঠনের অন্য নেতারা।
উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র (সমন্বয়ক) উমামা ফাতেমা। সোমবার মনোনয়নপত্র গ্রহণের শেষদিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। জানা গেছে, প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে উমামা ফাতেমা, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহী থাকবেন।
ছাত্র অধিকারের প্যানেল-ভিপি বিন ইয়ামিন-জিএস সাবিনা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সংগঠনটি ভিপি পদে কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে ঢাবি শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলামের। সোমবার দুপুরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তাদের প্যানেলের নাম ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ এবং স্লোগান হলো ‘ভোট ফর চেঞ্জ’। এছাড়া প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মো. শাকিল খান, সমাজসেবা পদে আরিফুর রহমান মজুমদার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মুক্তার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন পদে আশিক হৃদয় আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রাকিব হোসেন গাজী, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে ইশতিয়াক আহমেদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সিয়াম ফেরদৌস ইমন স্থান পেয়েছেন। ঘোষিত প্যানেলে সদস্য হিসাবে আছেন-রাহাত, রেজোয়ান, মো. মুহিউদ্দীন আহমেদ, কৌফিক আবির, আব্দুল্লাহ আল নোমান, রাকিবুল আলম রুদ্র, মোফাচ্ছেল হক ও মাহতাপ ইসলাম।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তারা। ফরম সংগ্রহ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল খায়রুল আহসান মারজান। ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-ইয়াছিন আরাফাত (ভিপি), খায়রুল আহসান মারজান (জিএস), সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (জিএস), আবু বকর (শিক্ষা ও গবেষণা), মোহাম্মদ আলী (ইসলামিক স্টাডিজ), পাবন আহমেদ (ইইই), আ. রহমান মাহফুজ (ইসলামিক স্টাডিজ), ইলিয়াস তালুকদার (আইবি), জুরাইয়া আক্তার (মলিকুলার সায়েন্স), মুঈনুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস), ইয়াসিন আরাফাত (সমাজবিজ্ঞান), ইমরান হোসাইন (ব্যাংকিং), ইসমাইল হোসাইন (ইসলামের ইতিহাস), সাব্বির আহমেদ (ইতিহাস), মানসুরুল হক শান্ত (ফিন্যান্স), মোসা. হাবিবা (ভাষাবিজ্ঞান), শাহরিয়ার জাবির (আইন), ওমর ফারুক (ইসলামিক স্টাডিজ), আফজাল হোসাইন সিয়াম (আরবি), নূরুল জান্নাত মান্না (আরবি), ইকরামুল কবির (ইসলামিক স্টাডিজ), আরিয়ান মাহমুদ রাসেল (ইসলামিক স্টাডিজ), মোহাম্মদ রিয়াদ (ওএসএল), রেজাউল করিম (আরবি), এরফান মোহাম্মদ (জার্নালিজম), জাকিয়া মুন (প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন), আব্দুর রহিম (ইসলামিক স্টাডিজ) এবং আব্দুর রহমান মাহফুজ (ইসলামিক স্টাডিজ)।
‘ডিইউ ফার্স্ট’ প্যানেল : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতা মাহিন সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ‘ডিইউ ফার্স্ট’ প্যানেল ঘোষণা করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ। সোমবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ নিজেই। এর আগে বিকালে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তারা।
এ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মো. মাহিন সরকার লড়বেন। এছাড়া, সহসাধারণ সম্পাদক পদে (এজিএস) পদে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রছাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফাতেহা শারমিন অ্যানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।