Image description
রাজনীতিবিদ খালেদা জিয়ার প্রথম সাক্ষাৎকার

দেশ, জাতি ও দলের এক চরম ক্লান্তিলগ্নে, গৃহকোণ ছেড়ে রাজনীতির হাল ধরতে কেবল এসেছেন বেগম খালেদা জিয়া। সেই উষাকালে সেই সময়কার আলোচিত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সচিত্র স্বদেশ’ থেকে আমার ওপর ভার পড়ে বেগম খালেদা জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার। পত্রিকাটির চার কালারের কভারে যাবে তার ছবি।

আমি দ্বারস্থ হই বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও একেএম মাইফুল ইসলাম মুকুল ভাইয়ের। মূলত এই দুই নেতার সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছিল সাক্ষাৎকার নেওয়া।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে আমার সঙ্গী ছিলেন সিনিয়র সাব-এডিটর সৈয়দ রেজাউল করিম। আলোকচিত্রগুলো ধারণ করেছিলেন সৈয়দ জ্যোতি ও শামসুদ্দীন আহমদ চারু।

আরও সঙ্গী হন রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী ও আহমদ মির্জা খবির।

১৯৮৩ সালের ২৬ মে সচিত্র স্বদেশের প্রচ্ছদ-কাহিনি হয়ে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

আজ এই শোকস্তব্ধ সময়ে দেশনেত্রীর সেই সাক্ষাৎকারটি যুগান্তরের পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা হলো :

স্বদেশ : জনগণের প্রিয় নেতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে আপনাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। কিন্তু আপনি সেই মুহূর্তে নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছেন, এর কারণ কী?

খালেদা জিয়া : সবকিছুরই প্রত্যক্ষ করার, বিবেচনা করার এবং অংশগ্রহণের প্রস্তুতির একটা সময় প্রয়োজন।

স্বদেশ : ইদানীং সংবাদপত্র দৃষ্টে মনে হচ্ছে আপনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এটা কি আপনার নিজের ইচ্ছায়, না মহলবিশেষের স্বার্থে?

খালেদা জিয়া : মহলবিশেষ বলে তেমন কিছু আমার জানা নেই। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে এবং সময়ের তাগিদে আমি স্বেচ্ছায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি।

স্বদেশ : জনগণ আপনার মাঝে তাদের প্রিয় নেতা জিয়াউর রহমানের প্রতিবিম্ব খুঁজে ফিরে, আপনি কীভাবে শহীদ জিয়ার স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়ন করবেন?

খালেদা জিয়া : শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত অগণিত কর্মীর সহযোগিতায় বিএনপির বাস্তবধর্মী সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে শহীদ জিয়ার স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নের আন্তরিক প্রয়াস চালাব।

স্বদেশ : শোনা যাচ্ছে, আপনি নাকি বিএনপির চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। অনুরূপ প্রস্তাব এলে আপনি তা গ্রহণ করবেন কি?

খালেদা জিয়া : দলের কাউন্সিলই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী।

স্বদেশ : বিএনপি বিভক্ত হওয়ার বা ভেঙে যাওয়ার কারণ কী? এ সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া বা অভিমত ব্যক্ত করবেন কি?

খালেদা জিয়া : বিএনপির বিভক্তি বা ভেঙে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কতিপয় চিহ্নিত রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে শহীদ জিয়া ও বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একটা হঠকারী রাজনৈতিক সার্কাসের অবতারণা করেছে মাত্র।

স্বদেশ : শহীদ জিয়ার জীবনের কোন দিকটা আপনার কাছে বেশি আকর্ষণীয়?

খালেদা জিয়া : ব্যক্তি জিয়া বলেন, রাষ্ট্রনায়ক জিয়া বলেন, সৈনিক জিয়া বলেন, রাজনৈতিক নেতা জিয়া বলেন-যাই বলেন না কেন, জিয়া জিয়াই। জীবনের সবদিকেই তিনি কৃতী পুরুষ ও অনুপম ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার জীবনের প্রতিটি দিকই আমার কাছে সমান আকর্ষণীয়।

স্বদেশ : ঐতিহাসিক ৩০ মে আগত। শহীদ জিয়ার স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ প্রায় বন্ধ। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খালেদা জিয়া : জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার শহীদ জিয়ার স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়। শহীদ জিয়ার সহধর্মিণী হিসাবে এ বিষয়ে আমার বলার কী আছে। তবে এটুকু বুঝি, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা জনতার হৃদয়ে চিরঞ্জীব। গোটা বাংলাদেশটাই শহীদ জিয়ার স্মৃতির স্মারক।

স্বদেশ : পত্রিকায় দেখলাম আপনি হঠাৎ করে রাজনৈতিক নেতাদের সবার আগে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা উপদ্রুত এলাকা সফরে গেছেন। এটা কি আপনাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে?

খালেদা জিয়া : আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানো, এর সাথে রাজনীতির সম্পর্ক কী? যারা জনগণের বিপদের দিনে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারেন না, জনগণের রাজনীতি করার এবং জনগণের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার তাদের নেই-এটাই শহীদ জিয়ার শিক্ষা, সর্বোপরি বিএনপির আদর্শও তাই।

স্বদেশ : ১৫ দলীয় ও ১০ দলীয় জোট সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

খালেদা জিয়া : জোট হওয়া ভালো।

স্বদেশ : বর্তমান সরকারের শিক্ষানীতি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী।

খালেদা জিয়া : বিষয়টি জনগণের কাছে এখনো অস্পষ্ট।

স্বদেশ : ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কীরূপ হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন।

খালেদা জিয়া : সৎ প্রতিবেশীসুলভ।

স্বদেশ : ফারাক্কা, তালপট্টি, দহগ্রাম, আঙ্গরপোতার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

খালেদা জিয়া : এ সম্পর্কে বিএনপি বহু পূর্বেই তার প্রতিক্রিয়া এবং অভিমত ব্যক্ত করেছে।

স্বদেশ : আসামের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ওপর আপনার মতামত কী?

খালেদা জিয়া : সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবিদ্বেষ, দাঙ্গা ও আঞ্চলিক-বিদ্বেষ মানবতাবিরোধী-তা যে দেশেই হোক না কেন।