লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে রওনা দেবেন তারেক রহমান। বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে তিনি পরিবারসহ দেশে ফিরছেন।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা বাংলাদেশ বিমানের এক নিয়মিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে আগামীকাল সকালে সিলেটে যাত্রা বিরতির পর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবেন ইনশাআল্লাহ।
ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এরপর সড়ক পথে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। পথিমধ্যে তিনি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে-তে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে বিএনপি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে। সেখানে তিনি দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন। এরপর তিনি চলে যাবে এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখান থেকে তারেক রহমান গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসা যাবেন। এই বাসায় তারেক রহমান থাকবেন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় দিনে কর্মসূচিতে আছে, বাদ জুমা শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত এবং সেখান থেকে সড়কপথে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এই দুটি কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, পরদিন তারেক রহমান নিজে ভোটার হতে যা করতে হয় সেই কাজগুলো করবেন। এছাড়া সেদিন শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত এবং পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে যাবেন। তবে এসব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যথা সময়ে দিনের কর্মসূচিগুলো গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই, প্রিয় নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এই ঐতিহাসিক আয়োজনকে বাস্তবায়িত করতে দলের পক্ষ থেকে অনিবার্য অত্যাবশ্যক এবং ন্যূনতম যে সকল কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে সেজন্য সৃষ্ট অসুবিধা ও কষ্টের জন্য। আপনারা জানেন, তারেক রহমান এমন কোনো কর্মসূচিকে সমর্থন করেন না যা জনদুর্ভোগের কারণ সৃষ্টি হতে পারে। তিনি ইতোমধ্যে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে প্রবাসী নেতাকর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি হতে নিষেধ করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশেও আমাদের কোনো কর্মসূচি যেন জনদুর্ভোগের কারণ না সৃষ্টির করে সেজন্য আমরা তার নির্দেশনা পালনের আন্তরিক শত চেষ্টা সত্ত্বেও সেটা হয়তো এক শতভাগ প্রতিপালন করতে পারিনি। তারপরও জনদুর্ভোগের জন্য আমরা অগ্রিম ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি আরও বলেন, তিনি (তারেক রহমান) স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, তিনি বিমানবন্দর থেকে তার চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ মা বাংলাদেশের অভিভাবক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যেতে চান, তার পিতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারতে যেতে চান, তার ভাইয়ের (আরাফাত রহমান কোকো) কবরের পাশে যেতে চান। জনদুর্ভোগ পরিহার করে করতে তিনি সরকারি ছুটির দিনকে তার প্রত্যাবর্তনের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ৩০০ ফিটের অনুষ্ঠানটি কোনো জনসভা নয়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও নয়। শুধু দেশবাসীর প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দেশনেত্রীসহ দেশের সবার কল্যাণ কামনায় দোয়ার অনুষ্ঠান। সেই আয়োজনে তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো বক্তা থাকছেন না। আমরা এই আয়োজনের কলেবর যত ছোটই রাখতে চাই না কেন ১৭ বছর ধরে অপেক্ষমাণ দেশের সকল প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মী সমর্থকদের বাঁধভাঙা মুক্তি স্রোত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমাদের নেই। তারপরেও আমরা আমাদের কর্মী সমর্থকদের নির্দেশনা দিয়েছি যাতে তাদের বেশিরভাগ কাঞ্চন ব্রিজ ব্যবহার করে অনুষ্ঠানস্থলে আসার।
রাজধানীতে বিভিন্ন পয়েন্টে অভ্যর্থনা কেন্দ্র, যানবাহন পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থান, মেডিকেল ক্যাম্প, ফিল্ড হাসপাতাল প্রভৃতি বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের যে দলগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেটা সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র একটা অংশ হলো চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। তারপর আমাদের দলীয় নেতাকর্মী এবং সর্বোপরি বাংলাদেশে আপামর জনসাধারণ হলো আমাদের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি। সরকারের তরফ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছেন এবং আমাদের সব ধরনের সহায়তার জন্য সরকার তার বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের সাথে আমাদের গভীর এবং গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সব গভার্মেন্টাল অর্গানাইজেশন ও আমাদের দলীয় যে শক্তি আছে, সেটাকে ইন্টিগ্রেট করে আমরা আশা করছি আমাদের জানা মতে যতটুকু নিরাপত্তার থ্রেড আছে তার যে ধরনের শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা সৃষ্টি করব।
সিলেট বিমানবন্দরে ভিড় না করার নির্দেশনা
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সিলেট, মহানগর, জেলার নেতাকর্মীদের আমি জানাচ্ছি নির্দেশক্রমে, আগামীকাল আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান দেশে আসছেন। তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানটি প্রথম ল্যান্ড করবে সিলেট বিমানবন্দরে। সিলেট জেলার কোনো নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে ভিড় করবেন না। বিমানবন্দরে কেউ যাবেন না। আমাদের নেতা ওই বিমানেই ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন। ঢাকায় এলে ওনাকে আমরা যে আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি সেখানে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে কথা বলবেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির সদস্য মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল উপস্থিত ছিলেন।