বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামীকাল দেশে ফিরবেন। তার আগমন উপলক্ষ্যে গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে দলটি। ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা রাজধানী ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অনেক প্রার্থী নিজের অবস্থান জানান দিতে কর্মীদের নিয়ে আগেভাগে ঢাকায় চলে এসেছেন। কেউ কেউ যানজট ও ভোগান্তি বিবেচনায় চলে এসেছেন আগেই। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক হোটেল ও মোটেলগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আবাসিক হোটেলগুলোর প্রায় সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। ফাঁকা নেই তিনতারকা মানের বা তার নিচের দিকের হোটেলের রুম। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ভাড়া করার খবরও পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে কক্ষ ভাড়ার চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে। অনেক হোটেলে অগ্রিম বুকিং সম্পন্ন হয়ে যাওয়ায় নতুন করে কক্ষ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুল, শাহবাগ, কাওরান বাজার, সায়েদাবাদ ও আশপাশের এলাকাগুলোতে এই চাপ তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে। হোটেল মালিকরা এই সুযোগে স্বাভাবিক পরিস্থিতির তুলনায় অতিরিক্ত রুম ভাড়া নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দলীয় নেতারা বলছেন, তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা যে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার দেশে প্রত্যাবর্তন ঘিরে শুধু বিমানবন্দর আর ৩০০ ফিট নয় বরং পুরো ঢাকা শহরে মানুষের সমাগম হবে।
হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ঢাকায় আসছেন। কেউ কেউ একাধিক দিন থাকার জন্য কক্ষ ভাড়া নিচ্ছেন। ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আবাসিক হোটেলগুলোতে ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে।
তবে ঢাকার বাইরে থেকে আসা সবাই হোটেলে অবস্থান করবেন না। অনেকেই ঢাকায় অবস্থানরত আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজন কিংবা দলের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে উঠছেন। এতে করে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায়ও অতিরিক্ত লোকসমাগম লক্ষ করা যাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের নেতা আজিজুল হক তার কর্মীদের নিয়ে আজ ঢাকায় আসবেন। কিন্তু রুম ফাঁকা না থাকায় কোনো হোটেল বুকিং করতে পারেননি। যুগান্তরকে তিনি বলেন, অনেক আগে থেকে রুম বুকিং করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম খালি না থাকায় সম্ভব হয়নি। খোলা আকাশের নিচে রাত যাপনের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ করবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে রাজধানীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ার কারণে যান চলাচল, আবাসন ব্যবস্থা ও সার্বিক জনজীবনে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে মানুষের চাপ বাড়লে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপনা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আবাসন, নিরাপত্তা, যান চলাচল ও জনশৃঙ্খলা-সবকিছু একসঙ্গে সামাল দিতে হয় প্রশাসনকে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে এক পলক দেখতে সারা দেশের দলীয় নেতা-কর্মীরা ঢাকা আসবেন। দলীয় কর্মসূচি সফল করতে আমরা রাতদিন কাজ করছি। তবে এত সংখ্যক মানুষের আবাসিক ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে সব ধরনের আবাসিক হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। বেশির ভাগ মানুষ মাঠ-ঘাট ও রাস্তায় অবস্থান নেবে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) স্বদেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তন কেন্দ্র করে রাজধানীর তিনশ ফিট সড়কে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে সরাসরি যাবেন তিনশ ফিট সড়কের সংবর্ধনা মঞ্চে। সেখানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন।
তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে বইছে উৎসবের আমেজ। বলা যায়, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন রূপ নিয়েছে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে। শুধু দলীয় শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং তারেক রহমানের এই আগমনকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এক নতুন মোড় হিসাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।