Image description

নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনেই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। একটি আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বাংলাদেশ জমিয়তে উলামা ইসলামের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি আসনেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আনোয়ার হোসাইন মোল্লা। বিএনপির প্রার্থী দিপু দলীয় কোন্দল মিটিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে নিয়ে নির্বাচনি মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। নানা পরিকল্পনার কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘সব শিল্পমালিকের সঙ্গে কথা বলব। রূপগঞ্জের প্রত্যেকটা শিক্ষিত ছেলেমেয়ের যেন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সেই ব্যবস্থা করব। নির্বাচিত হই বা না হই, শিগগিরই এই কার্যক্রম শুরু করব।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আনোয়ার হোসাইন মোল্লা বলেন, ‘আমরা জনসাধারণের কাছে যাচ্ছি এবং তাদের সঙ্গে কথা বলছি। সবাই এবার নতুন কিছু দেখার আশায় রয়েছেন। আশা করছি এবার জনসাধারণ বিকল্প বেছে নেবে।’

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। প্রাপ্ত তথ্যমতে তিনি কিছুটা চ্যালেঞ্জে রয়েছেন। তিনি এখনো নিজ দলীয় কোন্দল মেটাতে পারেননি। স্বতন্ত্র হিসেবে আলোচনায় সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর। তিনি নির্বাচনে মাঠে থেকে গেলে যে কারও জন্য লড়াই কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন অনেক ভোটার।

আজাদ বলেন, ‘২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছি। আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দল আমাকে মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দিয়েছে। আড়াইহাজারে ধানের শীষ রেকর্ড সংখ্যক ভোটে বিজয়ী হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি জনসাধারণ জামায়াতে ইসলামকে জয়ী করবে।’

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। নির্বাচনি এলাকার তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে দলীয় কোন্দল তাঁর জন্য বড় বাধা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া। প্রার্থী পরিবর্তন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আগের ঘোষিত প্রার্থী ফারুক আহমেদ মুন্সীকে পরিবর্তন করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে পদত্যাগ করা নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, ‘সোনারগাঁয়ের প্রতিটি মানুষের সুখদুঃখের সাথি হতে চাই। ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে সুযোগ দিন-আমি সোনারগাঁ এবং সিদ্ধিরগঞ্জকে আধুনিক, শিক্ষিত ও কর্মসংস্থানের শহর হিসেবে গড়ে তুলব।’

জামায়াতের প্রার্থী প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভুঁইয়া বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই কাজ করে আসছি। সোনারগাঁ এবং সিদ্ধিরগঞ্জের প্রত্যেকটি এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক আছে। আশা করি সোনারগাঁ এবং সিদ্ধিরগঞ্জবাসী আমাকে জয়ী করবে।’

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সদর) আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে। তবে তাঁকে মেনে নিতে নারাজ স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কাসেমী বলেন, ‘আমার আসনে বিএনপির কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বিচলিত হব না। স্বাগত জানিয়ে নিজের প্রচারণা চালিয়ে যাব। ধানের শীষ বা খেজুর গাছ প্রতীকের বিপরীতে কাউকেই চ্যালেঞ্জের উপযুক্ত বলে মনে করি না।’ জামায়াতের প্রার্থী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আবদুল জব্বার নির্বাচনের মাঠে সরব রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমরা মানুষের সেবক হব। ইতোমধ্যে আমরা অনেক সামাজিক কার্যক্রম করেছি।’

নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদকে। তিনি ১৬ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর আবার জনসাধারণের দাবিতে ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

মাসুদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ব্যবসা-অধ্যুষিত এলাকা। সব সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছিলাম। তারা আমাকে চাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও চাচ্ছে। জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়ন পেয়েছি। নির্বাচন করব।’ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ এবং খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন আলোচনায় রয়েছেন। আসন সমঝোতার মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে যেকোনো একজন শক্তিশালী প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন।

মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ বলেন, ‘মনে হচ্ছে মানুষ অনেক বছর অনেক দল অনেক দফা অনেক মার্কা দেখেছে। তাদের মধ্যে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামকে বিজয়ী করার আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।’

স্বতন্ত্রভাবে বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন বেশ আলোচনায় রয়েছেন। যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছিলেন। সমীকরণে তিনি কিছু জায়গায় এগিয়ে রয়েছেন। মাকসুদ হোসেন বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী। জনসাধারণের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। জনগণ আমাকে ভালোবাসে। তারা আমাকে চায়।’