Image description
চূড়ান্ত হচ্ছে বিএনপির ইশতেহার, গুরুত্ব পাচ্ছে ৩১ দফা ও জুলাই সনদ

১২ ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা এবং জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বয়ে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করছে বিএনপি। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ইশতেহারে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, পরিবেশ, কর্মসংস্থান ও ধর্মীয় নেতাদের জন্য উন্নয়ন সেবার বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তারুণ্যের আকাক্সক্ষাকে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আরও পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে ইশতেহার চূড়ান্ত করা হবে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপির ইশতেহার হবে দেশের মৌলিক গণতান্ত্রিক সংস্কার, গণমানুষ ও অর্থনৈতিক মুক্তিকে লক্ষ্য রেখে। এজন্য সারা দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের দোরগোড়ায় যাওয়া হচ্ছে। বিএনপির ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের গণমানুষের অর্থনৈতিক-গণতান্ত্রিক মুক্তি, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও সংসদীয় ব্যবস্থার আমূল বৈপ্লবিক সংস্কার হবে। এই ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ হবে। এতে গণতন্ত্র শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবে। সে রকম একটি নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

জানা যায়, ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে বলা হয়েছে প্রতি মাসে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকার আর্থিক সহায়তা অথবা খাদ্য সুবিধা চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপণ্য দেওয়া হবে। কৃষকের জন্য নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য কৃষক কার্ড নিয়ে বলা হয়- ন্যায্যমূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, সরকারি ভর্তুকি, প্রণোদনা, স্বল্প মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সুবিধা, স্বল্প ব্যয়ে সেচ সুবিধা, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ, কৃষি বিমা সুবিধা, ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রির সুবিধা, কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ, মোবাইলে আবহাওয়া ও বাজার তথ্য, মোবাইলে ফসলের রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের তথ্য সুবিধা দেওয়া হবে। মৎস্যচাষি ও প্রাণিসম্পদ খামারিরাও কৃষক কার্ডের সুবিধা পাবেন। সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ গঠনে বিএনপির পরিকল্পনায় বলা হয়েছে- দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দুর্নীতি প্রতিরোধ করবে।

দেশজুড়ে সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নতুনভাবে প্রায় এক লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হবে, যার ৮০ ভাগ হবেন নারী। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি মহানগর ও জেলা শহরে বসবাসকারী নাগরিকের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। আনন্দময় শিক্ষা, দক্ষ জনশক্তি ও আধুনিক বাংলাদেশ নিয়ে বলা হয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আধুনিক ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা অর্জনসহ সার্বিক সুযোগসুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে কম্পিউটার-ট্যাব প্রদান করা হবে। শিক্ষামূলক ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টারি ও অনলাইন কনটেন্টের মাধ্যমে কারিকুলাম ও নৈতিক শিক্ষার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ক্লাস সিক্স থেকে টিম-ওয়ার্ক, পার্সোনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট, পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা হবে। দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরিতে বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, জাপানিজ, কোরিয়ান, ইতালিয়ান, ম্যান্ডারিনকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে চালু করা হবে। আত্মকর্মসংস্থান ও বহির্বিশ্বে চাকরির সুযোগ তৈরিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষ এবং যোগ্য করে গড়ে তুলতে মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। এ ছাড়া মননশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার ইত্যাদি খেলা এবং সংগীত, নৃত্য, নাটক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক বিষয় পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হবে। 

সুস্বাস্থ্য ও খাদ্যে অগ্রাধিকার নিয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী সবার জন্য পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণ এবং সারা দেশে পর্যায়ক্রমে প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মিড-ডে মিল’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। তৃতীয় ভাষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, আইটি ও কারিগরিসহ সব বিষয়ে মেধাবী তরুণদের শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী করে গড়ে তুলে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বিদ্যমান সব ক্যাডার ও নন-ক্যাডার শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা বাড়ানো হবে। খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে জাতীয় শিক্ষাক্রমে চতুর্থ শ্রেণি থেকে খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করা হবে। ‘নতুন কুঁড়ি স্পোর্টস’ কর্মসূচির মাধ্যমে ১২-১৪ বছরের প্রতিভাবান ক্রীড়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, ৬৪ জেলায় ইনডোর সুবিধাসম্পন্ন স্পোর্টস ভিলেজ নির্মাণ, দেশের সব উপজেলায় ক্রীড়া অফিসার ও ক্রীড়া শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বিষয়ভিত্তিক ক্রীড়া শিক্ষক নিয়োগ ও বিভাগীয় শহরে বিকেএসপির শাখা প্রতিষ্ঠা করবে। সারা দেশে অন্তত ২০ হাজার কিলোমিটার খাল ও নদী খনন-পুনঃখননের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত, তিস্তা ব্যারেজ উন্নয়ন ও পদ্মা ব্যারেজের মতো প্রকল্প নেওয়া হবে। পাশাপাশি পাঁচ বছরে ২৫ কোটি গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সারা দেশে পর্যায়ক্রমে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে।

খতিব, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে বলা হয়েছে- খতিব, ইমাম-মুয়াজ্জিনকে মাসিক সম্মানি প্রদান, ধর্মীয় উৎসবে বিশেষ ভাতা, দক্ষতা-উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্যান্য ধর্মের (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য) উপাসনালয়ের প্রধানদের মাসিক সম্মানি ও উৎসব ভাতা দেওয়া হবে। ইশতেহার প্রচারের জন্য মূল দল এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে বৃহৎ তথ্য-প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আট নীতির প্রতিটির বিষয়ে বিস্তারিত তাদের জানানো হয়েছে। এই কর্মীরা নিজ এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে এসব তথ্য পৌঁছে দেবেন। ফলে মানুষ আগেভাগেই জানতে পারবে বিএনপি তাদের জন্য কী পরিকল্পনা করেছে। এতে ভুল তথ্যের সুযোগ কমবে, ভোটাররা নিজেদের ভবিষ্যৎ ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।  বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, কৃষক ন্যায্য দাম পান না, তরুণরা বেকার হয়ে ঘুরছেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় মানসম্মত সেবা পাওয়া কঠিন। গত দেড় যুগেরও বেশি সময় রাজনীতি শুধু প্রতিশ্রুতি আর স্লোগানে ভরা ছিল। মানুষের জীবনে তেমন কোনো সুখবর বয়ে আনেনি। এখন সময় এসেছে এমন রাজনীতির, যা কথার চেয়ে কাজে বিশ্বাস করবে। বিএনপি সেই প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে। বিএনপি এখনই জনগণের জীবনোদ্ধারমূলক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে, যাতে জন রায়ে ক্ষমতায় গেলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করা যায়।