Image description
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কা

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হচ্ছে প্রথমবারের মতো। তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সারা দেশে চলছে ভোটের আমেজ। ১২ ফেব্রুয়ারির ভোটকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ দলগুলো স্বাগত জানিয়েছে। অধিকাংশ দলই ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছে; প্রার্থীও ঘোষণা দিয়েছে দলগুলো। মনোনয়ন পেতে দলবদলের হিড়িক চলছে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ; নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন; মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ; সংঘাত-সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ; লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি; প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে পোস্টাল ভোটিং এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা আসন্ন নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। এদিকে তফসিল ঘোষণার এক দিন পরে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নির্বাচনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গতকাল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, অনেক নতুনের নির্বাচন হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। আইনবিধি সংস্কার নিয়ে সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট অনন্য মাত্রা আনছে। আবার একটি বড় দল ভোটের বাইরে থাকায় বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচনেও নানা বাধা আসতে পারে। তুলনামূলক পরিবেশে ভোটার উপস্থিতি বাড়ার আশা ও অংশগ্রহণমূলক ভোটের পথে বর্তমান ইসির প্রতি আস্থার পরীক্ষাও সামনে। ভোটের বাদ্য বাজলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। পৌনে ১৩ কোটি ভোটারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে লড়বেন। এবার ৫৫টি দল নিবন্ধিত রয়েছে।

এবার নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের কঠোরতা ও কার্যকারিতা। এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কঠোরতা প্রদর্শন করতে পারেনি বলে আমার আশঙ্কা। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও তাদের মনোনীত প্রার্থীদের সদাচরণ। তারা যদি হানাহানি ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। তারা যদি অসদাচরণ করে, সংঘাত-সহিংসতার পথ বেচে নিয়ে ছলেবলে কৌশলে রাজনৈতিক বৈতরণি পার হতে চায় তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না।’ তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সদাচরণ করে এবং নির্বাচন কমিশন যদি কঠোর ভূমিকা পালন করে তবে ভোটের চ্যালেঞ্জ কমে যাবে।

এদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে সব ধরনের উদ্যোগ ও সরকারের সহযোগিতার কথা ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন তফসিল ঘোষণাকালে বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ ভোটারদের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও সক্রিয়তা কামনা করছি। সবার প্রতি আমার আহ্বান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সফল করে আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখুন।’ এবারের নির্বাচনকে ‘জাতির ইতিহাসে অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটের অনুষ্ঠান উৎসবে রূপ নেবে।’ বিশ্লেষকদের মতে, সংস্কার হয়েছে আইনবিধিতে, সংসদ ও গণভোট একসঙ্গে হচ্ছে; এগুলো সবই মাইলফলক। প্রবাসী ভোটিং হচ্ছে মাইলফলক। এগুলো সব মাইলফলক। কিন্তু চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জটা সব সময় কাজের অংশ হয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য ইলেকশন কমিশনের প্ল্যান থাকতে হবে। যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হতে হবে ইসিকে।

ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী প্রচারে মাঠে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিক হবে আমরা সব নিশ্চয়ই নিশ্চিত করব।’ যাতে কেউ অন্ততপক্ষে কোনো অভিযোগ না করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি। আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির কঠোর পদক্ষেপ থাকলেও রাজনৈতিক দলের সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন সচিব। আখতার আহমেদ বলেন, ‘এখন কথাটা হচ্ছে, এটা তো আমাদের দিক থেকে পদক্ষেপ থাকবে। এরপরও যারা এর সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক দলের তাদেরও সদিচ্ছার ব্যাপার থাকতে প্রাসঙ্গিক। আমি বিশ্বাস করি, আমি আস্থা রাখি এবং আমি এটা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে সবাই সহযোগিতা করবেন।’ কেউ যদি না মানেন তাহলে তার জন্য আইনগতভাবে যে ব্যবস্থাটা আছে, সেটা নেওয়া হবে, উল্লেখ করেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, মব এখনও চলছে, নিয়মিত অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নজন আক্রান্ত হচ্ছে, বিভিন্ন সম্প্রদায় আক্রান্ত হচ্ছে। এমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে মানুষ নির্বাচনি পরিবেশে আস্থার মধ্যে আনতে পারছে না। মানুষের সামনে সংশয় আছে। ভোট সামনে রেখে রাজনৈতিক জোটের হিসাবনিকাশও চলছে, ভোটের তারিখ হলেও সংশয় কাটছে না। জোটেও নানা রকমের ইকুয়েশন, শেষ থেকে আরও মোড় নিতে পারে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে নানা রকম শঙ্কা আছে, সংশয় আছে। অন্যদিকে এবার আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আওয়ামী লীগ ভোটের বাইরে থাকা আবার জাতীয় পার্টি নিবন্ধিত থাকলেও ভোটে অংশগ্রহণ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এই দুই দলের সমর্থকরাও ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতে পারেন। এ ছাড়া মাঠ প্রশাসন তথা ডিসি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পরস্পরবিরোধী দাবি রয়েছে। সেগুলো নিয়ে মাঠ প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।