সিলেট-৫ আসন নিয়ে এবার নাটকীয়তার অন্ত নেই। দিন দিন বদলাচ্ছে দৃশ্যপট। অদৃশ্য দুই জোটের সমঝোতার ভোটে নানা হিসাব চলছে। আসনটি চায় সবাই। প্রধান দল বিএনপি এ আসনে এখন পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা না করার কারণেই সব নাটকীয়তা চলছে। এতে বিভ্রান্ত ভোটাররা। বিএনপি’র মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন হতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। যদি এমনটি হয় তাহলে ভোটের শেষদিন পর্যন্ত এ আসনে নানা নাটকীয়তা অপেক্ষা করছে। গত দুইদিন ফেসবুক সয়লাব। এ আসনের জমিয়ত সমর্থকরা ফেসবুকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে শুকরিয়া আদায় করছেন। কেন এই শুকরিয়া আদায়? উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল- এ আসনে জমিয়ত প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ ফারুকই প্রার্থী হচ্ছেন। বিএনপি জোট থেকে তাকে প্রার্থী দেয়া হচ্ছে। জেলা উত্তর জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুফতি এবাদুর রহমান এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো উত্তর না দিলেও জানিয়েছেন- জমিয়ত এ পর্যন্ত চার আসনে চারজন প্রার্থী পেয়েছে। এটা সবাই জানেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা হয়নি।
সার্বিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা, দরকষাকষি সবই হচ্ছে। এরপর কেন্দ্রের তরফ থেকে সব জানানো হবে। তবে গতকাল বিকালে কেন্দ্রের একাধিক নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেট-৫ আসনে জমিয়ত সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে প্রার্থিতা প্রায় চূড়ান্ত। কেবলমাত্র ঘোষণা বাকি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জমিয়ত জোটবদ্ধ নির্বাচনে গেলে অন্তত ১০টি আসন চায়। চারটির নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেও বাকিগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত না আসায় বলা যাচ্ছে না জমিয়ত জোটবদ্ধ নির্বাচনে যাবে না এককভাবে নির্বাচন করবে। বিষয়টি নিয়ে আজ-কালের মধ্যে ঢাকায় জমিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। এই বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে জমিয়তের সিদ্ধান্ত। দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সিলেট-১ আসনের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী জানিয়েছেন- সিলেট-৫ ও সিলেট-৪ হচ্ছে জমিয়তের অগ্রাধিকার। ভোট এলে দু’টি আসনই জমিয়তের কাছে সমান্তরাল হয়ে যায়। এবার দু’টি আসনই চায় জমিয়ত। এ বিষয়ে দলের ভেতরে বেশির ভাগ নেতাকর্মীর ঐকমত্য রয়েছে। এদিকে সিলেট-৫ আসনটি এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই নানা ভাবে আলোচনায়। স্থানীয় বিএনপি চেয়েছিল এবার তাদের নিজের প্রার্থী। সেটি হয়তো হচ্ছে না। তবে মাঠ ছাড়ছেন না জেলা বিএনপি’র প্রথম সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন। তিনি এবার বিএনপি’র মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
মামুনের মতে; সিলেট-৫ আসনে বিএনপি তথা ধানের শীষকে ভোটের মাঠে ফেরাতে হবে। প্রতিবারই বলা হয় ভোট ব্যাংক নেই। এটা ঠিক না। এ আসনে বিএনপি’র যত ভোট রয়েছে অন্য আসনেও তা নেই। কিন্তু সেটি তো পরীক্ষা করার সুযোগ মিলছে না। বিষয়টি প্রমাণ করতে হলে কাউকে না কাউকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে এ আসনে ধানের শীষ ভোটের মাঠে ফিরে আসতে পারে। এদিকে- চাকসু মামুন এখনো ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছে। তার যুক্তি দু’টি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে এখনো এ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। অন্যটি হচ্ছে; তিনি এখনো মনোনয়নপ্রত্যাশী। ফলে তিনি মাঠে আছেন। তার পক্ষে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে জানান। এ আসনের বিএনপি’র নেতাকর্মীরা চাইছেন ধানের শীষের প্রার্থী। সর্বশেষ মাঠে টিকে থাকা মামুনের পক্ষেই দলটির বেশির ভাগ নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। আসনটিতে অদৃশ্য থাকা অপর জোটের হিসাবও নাটকীয়তায় ভরা। আসনটিতে ২০০১ সালের নির্বাচনে জোটবদ্ধ ভোটে এমপি হয়েছিলেন জামায়াত নেতা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। ওই নির্বাচনে বিএনপি’র কোনো প্রার্থী ছিলেন না। ফলে জামায়াতের দাবি, এ আসনে তাদের ভোট ব্যাংক রয়েছে। কিন্তু হিসাবে তা মিলছে না। এবার তারা প্রার্থী দিয়েছে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আনোয়ার হোসেন খানকে। তিনি তাকে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়া কতোখানি সম্ভব এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এজন্য খেলাফত মজলিস এ আসনে আন্দোলনে শরিক থাকা ৮ দলের সমর্থন চাইছে। আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মুফতি আবুল হাসান। ইতিমধ্যে তিনি ভোটের হিসাবে বেশ আলোচনায় এসেছেন। হিসাব বলছে; তিনি ভোটে ফ্যাক্টর। জকিগঞ্জ থেকে প্রার্থী। খেলাফত মজলিসও তাকে জয়ী প্রার্থী হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। সেই আঙ্গিকেই তারা সাজাচ্ছেন ভোটের মাঠ। সিলেটের একটি আসন চায় বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন। এ আসনে তাদের প্রার্থী তরুণ নেতা মুফতি রেজাউল করিম আবরার। শেষ পর্যন্ত জোট সমর্থন কোনদিকে যায় সেটি এখন দেখার বিষয়। সিলেটের ফুলতলী পীরের আসন এটি। এ আসনের সদ্য সাবেক এমপি ফুলতলী পীরের ছেলে মাওলানা হুসাম উদ্দিন চৌধুরী। সংগঠন আল ইসলাহ’রও ভোট ব্যাংক রয়েছে এ আসনে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মাওলানা হুসাম উদ্দিনের ওপর সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি কী করবেন বলা মুশকিল। তবে ভোট নিয়ে এখনো নীরব রয়েছে মাওলানা হুসাম উদ্দিন।