আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কিশোরগঞ্জে জমজমাট প্রচারণা চলছে। ছয়টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে। তবে মাঠের খবর অনুযায়ী, সবকটি আসনেই বর্তমান সময়ের বড় দল বিএনপির সঙ্গে অন্যদের লড়াই হবে। বিএনপি, জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীদের মধ্যে মূলত ভোটযুদ্ধ হবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর) : এ আসনে বিএনপির দ্বিতীয় ধাপের ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একেবারেই নতুন মুখ। এখানে বিএনপিতে রয়েছে নানামুখী কোন্দল। নির্বাচনে এটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে অন্য দলগুলো। মাজহারুল ইসলাম বলেন, কোন্দল বা মনোমালিন্য যাই থাকুক সবাই দলের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করবেন। নির্বাচনে জামায়াতকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন জেলা জামায়াতের সদস্য অধ্যাপক মোছাদ্দেক ভূঞা, ইসলামী আন্দোলন থেকে আজিজুর রহমান, খেলাফত মজলিস থেকে দলটির জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা হিফজুর রহমান খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ জামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা মুফতি হেদায়েত উল্লাহ হাদী, গণঅধিকার পরিষদ থেকে দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মী সমর্থকরা আশা করছেন, তাদের মধ্যে নির্বাচনি জোট হলে ভোটের মেরূকরণ তাদের পক্ষেই যাবে।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া) : এবার এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন। তিনি এর আগে পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন। এখানে জামায়াতের প্রার্থী কটিয়াদী উপজেলা শাখার কর্মপরিষদ সদস্য কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল। বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ আসনে প্রার্থী রয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা শফিকুল ইসলাম রুহানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মাওলানা রশীদ আহমদ জাহাঙ্গীর হুসাইনী ও গণঅধিকার পরিষদের শফিকুল ইসলাম শফিক।
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ ও তাড়াইল) : বিএনপি থেকে এ আসনে ড. এম ওসমান ফারুককে মনোনয়ন দিলেও তিনি এখনো প্রচারণায় নামেননি। তবে তার অনুসারীরা বিচ্ছিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ওসমান ফারুক বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল তাকে। প্রায় আট বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটাতে হয়েছে। তবে এলাকার জনগণ তাকে ভালোবাসে এবং এবারের নির্বাচনে তার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদী তিনি।
এখানে জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য প্রফেসর কর্নেল (অব.) ডা. জেহাদ খান। বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের প্রার্থী ডা. জেহাদ খানের এমনটাই মনে করছেন ভোটাররা।
এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলটির জেলা কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা প্রভাষক আলমগীর হোসাইন তালুকদার ব্যাপক গণসংযোগসহ নানামুখী প্রচারণা চালাচ্ছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনিও থাকবেন বলে আশা করছেন। অনেকে আশা করছেন, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে নির্বাচনি জোট হলে তাদের প্রার্থীর জয়লাভ অনেকটাই সহজ হবে। এখানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা জুবায়ের আহম্মদ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মুফতি আব্দুচ্ছালাম।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) : এ আসনে এবারের নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং তুখোড় বক্তা হিসেবে সুপরিচিত অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে তাঁর। আসনটিতে সহজেই তিনি জয়লাভ করবেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। তবে জামায়াত প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর (উত্তর) মজলিসে শুরা সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রোকন রেজা শেখ। এ আসনে আরও প্রার্থী হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের অ্যাডভোকেট বিল্লাল আহমেদ মজুমদার, খেলাফত মজলিসের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক অলীউর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা খায়রুল ইসলাম ঠাকুর ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মাওলানা আনোয়ার হোসাইন।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর ও নিকলী) : অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাজিতপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল। এলাকায় বেশ জনপ্রিয় তিনি। তার পক্ষে মানুষের যে আবেগ উচ্ছ্বাস এবং গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, সে কারণে দীর্ঘদিনের হারানো আসনটি উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন বলে মনে করছেন তিনি। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রমজান আলীর সঙ্গে। এ ছাড়া এখানে প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মাওলানা নুরুদ্দিন আমিনী।
কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব ও কুলিয়ারচর) : এ আসনের সাবেক এমপি ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। বিএনপি থেকে এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম। তিনি জানান, বিপুল ভোটে জয়ী হবেন তিনি। এবার আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচনে জামায়াতসহ অন্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন।
জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন দলটির ভৈরব উপজেলা শাখার আমির মাওলানা কবির হোসেন। জয়ের ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সহসভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা লায়েছ উদ্দীন ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ থেকে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ফজলুল হক প্রার্থী হয়েছেন।